অশান্ত পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে রাশিয়া: সাবেক কূটনীতিক


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: October 18, 2022 09:40:59 | Updated: October 18, 2022 09:53:43


ছবি: টুইটার

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেইন আগ্রাসন রাশিয়াকে অশান্ত পরিস্থিতির পথে ঠেলে দিয়েছে। জনমনে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পুতিনকে ক্ষমতা ছাড়তে হতে পারে, দেশে গৃহযুদ্ধ বাধতে পারে, এমনকী দেশটি টুকরোও হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন সাবেক এক রুশ কূটনীতিক। à¦–বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের পর যিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি হচ্ছেন, বরিস বন্দারেভ। জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী মিশনে তিনি কাউন্সেলর হিসেবে জেনেভায় দায়িত্বরত ছিলেন। নিজের দেশ কতটা দমনমূলক এবং যুদ্ধবাজ হয়ে গেছে তা বুঝতে পেরে গত মে মাসে তিনি পদত্যাগ করেন।

পুতিনের সমালোচনা করে তিনি প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শব্দের একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, তার দেশ সুবিধাবাদিদের ‘জ্বি হুজুর’ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

ফলে পুতিন তার নিজস্ব প্রচারের ইকো চেম্বারে বসে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছেন। বন্দারেভ বলেন, ‘‘এখন যদি পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তবে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ গভীরভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

‘‘এবং পুরোপুরি সম্ভাবনা আছে যে, তার উত্তরসূরিও এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে এটা হওয়ার কারণ, পুতিনের সব উপদেষ্টাই নিরাপত্তা বাহিনী থেকে এসেছেন। পুতিনকে ছাপিয়ে যাওয়ার মত মানুষ রাশিয়ায় নেই। তাই রাশিয়া হয়ত পুরোপুরি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রবেশ করবে। এটি এমনকী চরম বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে।”

বন্দারেভের এই সমালোচনামূলক প্রবন্ধ নিয়ে মন্তব্য জানতে রয়টার্স থেকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে হলেও সেখান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

ক্রেমলিন এটিকে অবশ্য খুবই ত্রুটিপূর্ণ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, ব্যালট বক্সে পুতিনের জনপ্রিয়তা বার বার দেখা গেছে।

ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালিয়ে তিনি কোনও ভুল করেননি বলে শুক্রবার ফের সাফাই গেয়েছেন পুতিন। বরং তিনি মনে করেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করে দিতে চায়। আক্রমণাত্মক ও অহংকারী পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এটিকে তিনি অস্তিত্বরক্ষার লড়াই বলে মনে করেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। তারপর আট মাস পেরিয়ে গেলেও যেসব লক্ষ্যে পুতিন এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তার বলতে গেলে কিছুই পূরণ হয়নি।

পুতিন তার বিশাল বাহিনী ও শক্তিশালী সমরাস্ত্র নিয়ে ইউক্রেইনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। অন্যদিকে, সামরিক শক্তিতে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক দুর্বল ইউক্রেইন তাদের বেশ ভালভাবেই প্রতিহত করে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ও তাদের মিত্র দেশ ইউক্রেইনকে অস্ত্র, সমর সরঞ্জাম ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে।

রাশিয়ার কী পতন ঘটছে?

বন্দরেভ নিজেকে একজন ‘নির্বাসিত কূটনীতিক’ বলে পরিচয় দেন।

একজন কূটনীতিক কিভাবে রাশিয়ার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে সরকারের পক্ষে কথা বলে মস্কো থেকে পুরস্কৃত হন, তা তিনি তার লেখায় বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘মস্কো সব সময় চায় তারা যেটা আশা করছে সেটাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরা হোক...সেটা নয় যেটা বাস্তবে ঘটছে। সারা বিশ্বে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের এই বার্তায় দেওয়া হয়।”

ইউক্রেইন যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনও ধরনের যুদ্ধবিরতি পুতিনকে আরও সময় দেবে।

তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র পুতিনকে পুনরায় আক্রমণ করার আগে তার বাহিনীকে আবারও অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার সুযোগই কেবল দেবে।

‘‘একটি মাত্র উপায়ে কেবল পুতিনকে থামানো সম্ভব এবং সেটি হচ্ছে একটি ব্যাপক পথ।”

যারা রাশিয়ার পতনের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা হয়ত এর পরিণতি বিবেচনা করতে চান বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার নাগরিকরা হয়ত পুতিনের চেয়েও যুদ্ধংদেহী নেতার পেছনে জড়ো হতে পারেন, একটি গৃহযুদ্ধ উস্কে দিতে পারেন, বাইরে থেকে আরও আক্রমণ হতে পারে বা উভয়ই হতে পারে।

‘‘যদি ইউক্রেইন জেতে আর পুতিন হেরে যান তবে পশ্চিমারা সবচেয়ে ভালো যে জিনিসটা করতে পারে সেটা হল অপমান না করা।”

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার মানুষরা যে অপমান সহ্য করেছিল, তা পশ্চিমাদের জন্য একটি শিক্ষা হওয়া উচিত বলে মনে করেন বন্দারেভ।

তিনি বলেন, ‘‘সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালের পর পশ্চিমারা যে ব্যবহার করেছিল তার পুনরাবৃত্তি ঘটনো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

“সোভিয়েত ইউনিয়েনের পতনের পর রাশিয়ার সাধারণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে বলে বোধ করেছিল। পশ্চিমারা যদি সহায়তা করে তবে তা রাশিয়ার মানুষদের জন্য শেষ পর্যন্ত তাদের রাজত্বের পতন মেনে নেওয়া সহজ করবে।”

Share if you like