মাস গেলে যে টাকা পাই তা খরচ করেই চলে যায়। সঞ্চয় করার মতো হাতে তেমন কোনো টাকা থাকে না।
যা কিছু থাকে তা দিয়ে বড় কিছু করা যাবে না। তাই প্রতি মাসে সঞ্চয় করা হয়ে ওঠে না।
এ ধরনের বিভিন্ন কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। আয় এখন যতই থাকুক, যদি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে এর মধ্যে থেকেও সঞ্চয় করা যায়।
আর এই আর্থিক সঞ্চয় সম্পর্কে টিপস দিয়েছেন ‘স্মার্ট মানি হ্যাকস’ বইয়ের লেখক কর প্রশিক্ষক জসীম উদ্দিন রাসেল।
লক্ষ্য ঠিক করুন
কোনো কাজ শুরু করার আগে যদি লক্ষ্য ঠিক করা থাকে তাহলে সেটা অর্জন করতে অনেক সুবিধা হয়। তেমনি যখন সঞ্চয় শুরু করবেন তার আগে কিছু লক্ষ্য ঠিক করুন।
দুই ভাগে এই লক্ষ্যকে ভাগ করা যায়। স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী।
স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য, এক বছর বা এর কম সময়ের জন্য হতে পারে। যেমন- কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বাসার জন্য ফ্রিজ/ টিভি কেনা বা অন্য কোন দরকারী কাজ।
আর দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য হতে পারে, পাঁচ বছর পরে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কী করতে চান। যেমন- হতে পারে ফ্ল্যাট/ প্লট বুকিং দেওয়া, ছেলেমেয়ের উচ্চ শিক্ষা, হজ ইত্যাদি।
এভাবে যখন লক্ষ্য স্থির করবেন তখন এই সময়ের জন্য মাসে কত করে জমাতে হবে তা পেয়ে যাবেন। আর এই লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতি মাসে সঞ্চয় করতে থাকুন।
তবে প্রথমে যদি সঞ্চয়ের পরিমাণ কমও হয় তারপরেও হতাশ হবেন না। যা সঞ্চয় করতে পারছনে তা চালিয়ে যান। ভবিষ্যতে যখন আয় বাড়বে তখন সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেই হবে।
‘স্মার্ট মানি হ্যাকস’ বইতে ২৮টি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের খাত সম্পর্কে আলোচনা করে উল্লেখ করা হয়, যে টাকা সঞ্চয় করছেন তা এমন খাতে বিনিয়োগ করুন যেখাত থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন বা লাভ পাওয়া যাবে। এর ফলে উদ্দেশ্য পূরণ দ্রুত হবে।
ঋণ পরিশোধ করুন
সঞ্চয়কৃত টাকা বিনিয়োগের আগে আপনার উচ্চ হারে কোন ঋণ নেওয়া আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি উচ্চ হারে কোনো ঋণ নেওয়া থাকে তাহলে সঞ্চয়কৃত টাকা বিনিয়োগের আগে ঋণের টাকা পরিশোধ করুন। তারপর সঞ্চয়কৃত টাকা বিনিয়োগ করুন।
ধরা যাক, আপনি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে ৭% মুনাফা পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যে ঋণ নিয়েছেন তার ওপর ১২% করে সুদ দিচ্ছেন। এখানে আপনি বেশি সুদ দিচ্ছেন ৫%।
এজন্য আগে আপনি লোন পরিশোধ করুন এবং পরে সঞ্চয়ের টাকা বিনিয়োগ করুন।
খুচরা টাকা আলাদা করে রাখুন
প্রায়ই শুনে থাকি খরচের পর হাতে আর কোনো টাকা থাকে না। তাই সঞ্চয় করা হয়ে ওঠে না।
খরচের পর সঞ্চয়ের চিন্তা না করে আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আলাদা করে ফেলুন। তারপর খরচ করুন। তাহলে দেখবেন প্রতি মাসে সঞ্চয় করতে পারছেন।
যদি এভাবে সঞ্চয় করতে না পারেন তাহলে আপনি আরেকটি কৌশল নিতে পারেন।
প্রতিদিন বাসায় আসার পর পকেটে যে খুচরা টাকা থাকবে তা আলাদা করে রাখুন। বা সপ্তাহের বাজার করে বাসায় এসে যে খুচরা টাকা থাকবে তা আলাদা করে রাখুন। এভাবে টাকা আলাদা করে রেখে মাস শেষে যে টাকা জমবে তা ব্যাংকে আলাদা অ্যাকাউন্টে জমা করে রাখুন বা একটা ডিপিএস করতে পারেন।
এর ফলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর সঞ্চয়ের সাথে মুনাফা যোগ হয়ে ভালো একটা অংক পাওয়া যাবে।
খরচের তালিকা তৈরি করুন
মাসে যে খরচগুলো করেন তা একটি খাতায় টুকে রাখুন। খাতায় লিখতে অসুবিধা হলে মোবাইলে অ্যাপস ডাউনলোড করেও কাজটা করা যেতে পারে।
এভাবে কয়েক মাস নিয়মিত ছোট-বড় যত ধরনের খরচ করেছেন তা লিখুন। এবার, লক্ষ্য করুন কোন খরচগুলো বেশি করেছেন বা কোন খরচগুলো না করলেও চলতো।
এভাবে চিহ্নিত করে পরের মাস থেকে তা বাদ দিন বা কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
যদি দেখেন রেস্তোরাঁয় বেশি খাওয়া হয়েছে তাহলে তা কমিয়ে বাসায় তৈরি করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে একদিকে আপনার খরচ যেমন কমবে তেমনি অন্যদিকে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
যদি দেখেন বাসা ভাড়া তুলনামূলক বেশি দিচ্ছেন তাহলে একটু দূরে বাসা ভাড়া নিন। যাতায়াতে একটু বেশি সময় লাগলেও, এর ফলে যদি মাসে পাঁচ বা দশ হাজার টাকা সাশ্রয় হয় তাহলে তা সঞ্চয় করতে পারবেন।
বাড়তি আয় করার চেষ্টা করুন
এখন যে কাজ করছেন তার বাইরে অতিরিক্ত কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করার চেষ্টা করা যেতে পারে। যদি ছাত্র হন তবে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন বা পছন্দ মতো অন্য কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারেন।
যদি চাকরি করেন তাহলে অফিস থেকে বের হয়ে কিছু করার চেষ্টা করুন। বন্ধের দিনের সময়টাকেও কাজে লাগাতে। এভাবে অতিরিক্ত কাজ করে যে বাড়তি টাকা আয় করবেন তা সম্পূর্ণটাই সঞ্চয় করুন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে নেওয়া ।