জেলিফিশকে এতদিন ধরে একপ্রকার অখাদ্য বা ব্যবহার অনুপযোগী সামুদ্রিক প্রাণী হিসাবেই দেখা হতো।
তবে বাংলাদেশের গবেষকরা এখন বলছেন, রপ্তানি আয়ের একটি নতুন উৎস হয়ে উঠতে পারে এই জেলিফিশ । খবর বিবিসি বাংলার।
বিশ্বের অন্যসব সমুদ্রের মতো বাংলাদেশের উপকূলেও প্রচুর পরিমাণে জেলিফিশ পাওয়া যায়। ৯০ শতাংশ পানি দিয়ে তৈরি এই সামুদ্রিক প্রাণীর মস্তিষ্ক, রক্ত বা হাড় বলে কিছু নেই।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ৫০০ কোটি বছর আগে জেলিফিশের জন্ম হয়েছিল, যা ডাইনোসরের জন্মেরও আগে। মানুষ ব্যবহার না করলেও সাগরের খাদ্য চক্রের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেলিফিশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
বাংলাদেশের গবেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে জেলিফিশ বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলেও এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজের অধ্যাপক মোঃ রাশেদ-ঊন-নবী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''জেলিফিশ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই গবেষণা করছে, আমরাও গবেষণা শুরু করেছি। তাতে দেখা গেছে, এটির বাণিজ্যিক বেশকিছু সম্ভাবনা রয়েছে।''
গত মে মাসে পটুয়াখালীর সৈকতে আর অগাস্ট মাসে কক্সবাজার সৈকতে জেলিফিশের একটি ব্লুম বা আধিক্য দেখতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
সেই সময় জেলিফিশে ভরে যাওয়ায় অনেক জেলে তাদের জাল কেটে ফেলতে বাধ্য হন।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে যেসব জেলিফিশ পাওয়া যায়, তাকে আমরা তিনটা ক্যাটেগরিতে ভাগ করতে পারি।
''একটি হচ্ছে খাওয়ার উপযোগী জেলিফিশ। আমাদের এখানে এটা খাওয়া হয় না। কিন্তু তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড বা চীনে খাদ্য হিসাবে এর চাহিদা রয়েছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হলে সেখানে রপ্তানি করা সম্ভব,'' তিনি বলছেন।
সেই সঙ্গে এসব জেলিফিশ ওষুধ শিল্পের এবং কসমেটিকস শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে তিনি বলছেন।
এসব জেলিফিশ একেকটা আট থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
জেলিফিশের আরেকটি ধরন রয়েছে, যা বিষাক্ত। এসব জেলিফিশের সংস্পর্শে এলে তা জেলেদের স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে তা বিকল করে দেয়। তবে সব জেলিফিশ বিষাক্ত হয় না।
সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলছেন, এই ধরনের জেলিফিশের ব্যাপারে জেলেদের সচেতন করা এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার দরকার আছে। কারণ এতে আক্রান্ত হয়ে জেলেদের যে ক্ষতি হয়ে যায়, সেটাও কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এক ধরনের ক্ষতি। অনেক সময় জেলেরা সেটা ঠিকভাবে বুঝতেও পারেন না।
আর তৃতীয় যে ধরনটি রয়েছে, সেটি খুব ছোট আকারের জেলিফিশ। কিন্তু এসব জেলিফিশ বিশ্বের অনেক দেশে অ্যাকুরিয়ামে বা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
''এটাকে আপনি রিক্রিয়েশন পারপাস ব্যবহার বলতে পারেন। থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে এরকম অ্যাকুরিয়াম রয়েছে, যেখানে হাতের তালু আকৃতির স্বচ্ছ জেলিফিশ রাখা হয়। আপনি যে রঙের আলো ফেলবেন, সেটার রঙ সেরকম হয়ে যায়। পর্যটকদের কাছে এটা বেশ আকর্ষণীয় একটা ব্যাপার,'' তিনি বলছেন।
গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি এবং ফিশারিজ বিভাগের গবেষকরা মিলে জেলিফিশের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন।
''এটাকে আপনি রিক্রিয়েশন পারপাস ব্যবহার বলতে পারেন। থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে এরকম অ্যাকুরিয়াম রয়েছে, যেখানে হাতের তালু আকৃতির স্বচ্ছ জেলিফিশ রাখা হয়। আপনি যে রঙের আলো ফেলবেন, সেটার রঙ সেরকম হয়ে যায়। পর্যটকদের কাছে এটা বেশ আকর্ষণীয় একটা ব্যাপার,'' তিনি বলছেন। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি এবং ফিশারিজ বিভাগের গবেষকরা মিলে জেলিফিশের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন। সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাদ্য এসব জেলিফিশ। তবে নামের সঙ্গে 'ফিশ' যুক্ত থাকলেও হাড় না থাকায় এটিকে ঠিক মাছ হিসাবে গণ্য করেন না বিজ্ঞানীরা। তারা একে প্ল্যাঙ্কটন হিসাবে গণ্য করেন। মস্তিষ্ক না থাকলেও জেলিফিশের সারা শরীর জুড়ে স্নায়ু ছড়িয়ে রয়েছে। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, কোটি কোটি বছর আগে যখন সমুদ্রে নানা প্রাণী তৈরি হয়েছিল, সেই সময় জেলিফিশ সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে জেলিফিশকে ডাকা হয় নুইন্না। কারণ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পানি দিয়ে তৈরি, যা লবণাক্ত । সেখানে একটি এলাকার নামই হয়েছে নুইন্নাছড়া। তবে বাংলাদেশের সমুদ্রে কতো জেলিফিশ আছে, তা এখনো জানা নেই গবেষকদের। তারা এখন যে গবেষণা শুরু করেছেন, তাতে এই পরিমাণও যাচাই করে দেখা হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানির লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ওপরে জেলিফিশের সংখ্যা অনেকাংশে নির্ভর করে। এই বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততা বেশি ছিল, ফলে জেলিফিশেরও আধিক্য দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত যে পরিমাণ দেখা যায়, তার চেয়ে এই বছর যুক্তরাজ্যের উপকূলে অনেক বেশি জেলিফিশ দেখা গেছে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ১৯৯১ সালে মহাকাশে ২০০০ জেলিফিশ পাঠিয়েছিল। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে।জেলিফিশ নিয়ে আরও যা জানা যায়
জেলিফিশ নিয়ে আরও যা জানা যায়
সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাদ্য এসব জেলিফিশ।
তবে নামের সঙ্গে 'ফিশ' যুক্ত থাকলেও হাড় না থাকায় এটিকে ঠিক মাছ হিসাবে গণ্য করেন না বিজ্ঞানীরা। তারা একে প্ল্যাঙ্কটন হিসাবে গণ্য করেন। মস্তিষ্ক না থাকলেও জেলিফিশের সারা শরীর জুড়ে স্নায়ু ছড়িয়ে রয়েছে।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, কোটি কোটি বছর আগে যখন সমুদ্রে নানা প্রাণী তৈরি হয়েছিল, সেই সময় জেলিফিশ সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কক্সবাজারে স্থানীয়ভাবে জেলিফিশকে ডাকা হয় নুইন্না। কারণ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পানি দিয়ে তৈরি, যা লবণাক্ত । সেখানে একটি এলাকার নামই হয়েছে নুইন্নাছড়া।
তবে বাংলাদেশের সমুদ্রে কতো জেলিফিশ আছে, তা এখনো জানা নেই গবেষকদের। তারা এখন যে গবেষণা শুরু করেছেন, তাতে এই পরিমাণও যাচাই করে দেখা হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানির লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ওপরে জেলিফিশের সংখ্যা অনেকাংশে নির্ভর করে। এই বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততা বেশি ছিল, ফলে জেলিফিশেরও আধিক্য দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত যে পরিমাণ দেখা যায়, তার চেয়ে এই বছর যুক্তরাজ্যের উপকূলে অনেক বেশি জেলিফিশ দেখা গেছে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ১৯৯১ সালে মহাকাশে ২০০০ জেলিফিশ পাঠিয়েছিল। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে।