আর্থিক সংকটে খাবি খেতে থাকা পাকিস্তানে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বেতন-ভাতা ও ভ্রমণ খরচ কাটছাঁট করছে দেশটির সরকার।
রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বুধবার তার মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদেরকে ইকোনমি ক্লাসে চড়তে বলেছেন, বিলাসবহুল গাড়ি এবং বেতন বাদ দিতে বলেছেন। কৃচ্ছ্রসাধনের এই কর্মসূচিতে বছরে সরকারের ২০০ বিলিয়ন রুপি বাঁচানো যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে তলানির কাছাকাছি নেমেছে। তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত ডলারও ইসলামাবাদের হাতে নেই। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সেজন্য গত কয়েক মাস ধরে আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। কিন্তু নয় দফার বৈঠকেও কর্মকর্তা পর্যায়ের কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ।
এ পরিস্থিতিতে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া পাকিস্তান এখন কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ব্যায় সঙ্কোচন এখন সময়ের প্রয়োজন। এখন একটা পয়সাও বাঁচানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
তার ভাষায়, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এই ত্যাগটুকু স্বীকার করতে হবে দেশের গরিব মানুষের জন্য, যাদের খাবার এবং ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই, কারণ মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে ২৭.৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
শরিফ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সকল মন্ত্রণালয় এবং সরকারি দপ্তরগুলোকে খরচ ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের বেতন-ভাতা ও ভ্রমণ খরচ কাটছাঁট করতে হবে।
মন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় এই পদক্ষেপে সম্মত হয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেন, “মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্য তাদের বেতন এবং ভাতা সরকারের তহবিলে সমর্পণ করবেন এবং তারা তাদের সমস্ত ইউটিলিটি বিল নিজেদের পকেট থেকে পরিশোধ করবেন।”
তার ভাষ্য, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীও যুদ্ধবহির্ভূত ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি শরিফ।
কৃচ্ছ্রের অংশ হিসেবে সরকারের সকল সংস্থা ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে গাড়িসহ বিলাস সামগ্রী কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী দুই বছর নতুন করে কোনো জেলা বা শহরের মতো কোনো প্রশাসনিক ইউনিট তৈরি করা হবে না।
মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও আমলাদের সকল বিলাসবহুল যানবাহন নিয়ে নেওয়া হবে। অপরিহার্য পরিস্থিতিতে কেবল বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে, তবে সেখানেও ইকোনমি ক্লাসে চড়তে হবে কর্মকর্তাদের।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলছেন, আইএমএফ ঋণ চুক্তির আগে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলেছে, সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের ব্যয় সংকোচনের এই কঠোর পদক্ষেপ তারই অংশ।
ঋণ আলোচনার আগে পাকিস্তানকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছে আইএমএফ, যার মধ্যে রয়েছে- ভর্তুকি প্রত্যাহার, জ্বালানি শুল্ক বৃদ্ধি, অতিরিক্ত রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং বিদেশি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা।