প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে এবং সেটার ধাক্কা বাংলাদেশেও এসে পড়ছে।
শনিবার সকালে ‘৫১তম জাতীয় সমবায় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ”মূল্যস্ফীতির জন্য সবদেশই আজকে হিমশিম খাচ্ছে, প্রত্যেকের (বৈদেশিক মুদ্রার) রিজার্ভ ব্যবহার করেই তাদের চলতে হচ্ছে। আমাদেরও করতে হচ্ছে এবং সেটা দেশের মানুষের জন্য।”
সরকারকে উচ্চ মূল্যে সার, জ্বালানি তেল এবং ভোজ্য তেল কিনতে হচ্ছে উল্লেখ করে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাইকে তিনি মিতব্যয়ী এবং সঞ্চয়ী হবার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি কোভিড -১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সমবায় দিবসের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে যুব সমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে বরং সমবায় গঠনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন যেমন হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও অন্যান্য কাজে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন।
সরকার কর্তৃক স্থাপিত ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আপনারা (যুব সমাজ) সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করতে পারেন, যা শুধু স্থানীয় চাহিদাই মেটাবে না, বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেকটি সেক্টরকেই বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যার প্রধান লক্ষ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সে ক্ষেত্রে আমাদের কৃষি উৎপাদন ও মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য সমবায় একান্তভাবে অপরিহার্য্য। কারণ, এতটা ঘন বসতির দেশে সমবায়ই আমাদের অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সমবায় আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি উপজেলা পর্যায়ে দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম বিস্তৃত করায় সমবায় অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। কারণ, এর ফলে প্রায় ৫ হাজার পরিবার উপকৃত হবে। শিশুরা যেমন দুধ খেতে পারবে তেমনিভাবে বয়োবৃদ্ধদেরও পুষ্টির সংস্থান হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সমবায় ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আমরা পশু কোরবানীর ক্ষেত্রে নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি উল্লেখ করে সরকার প্রধান সকল ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হবার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
তাঁর সরকার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের প্রকল্প নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের বোঝা তাদের টানতে হবে না। সমবায়ের থেকে নেওয়া ঋণ থেকে তাদেরকে সঞ্চয়ী হতে হবে। এর মাধ্যমে কেউ আর পর মুখাপেক্ষী থাকবে না। সবাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দেন, “তারা যদি দু’শো টাকা সঞ্চয় করতে পারে তাহলে সরকারের তরফ থেকে আরো ২ বছর পর্যন্ত তাদের আরো দু’শো টাকা করে দেওয়া হবে এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সেটা জমা থাকবে। আর পরবর্তীতে প্রকল্পে না থাকলেও সে ব্যাংকের মূলধন দিয়েই তার সমস্ত কার্যক্রম চালাতে পারবে।”
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. তরুণ কান্তি সিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান।
শুরুতে জাতীয় সমবায় দিবসের একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোট নয়টি সমবায় সমিতি এবং একজন ব্যক্তিকে জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০২১ প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ বছর সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ের উন্নয়ন’।