বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সাগর-মহাসাগরে নিজেদের শক্তি দেখাতে তৎপর চীনের নৌবাহিনী বড় নৌবহর ও বৃহত্তর জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতায় তাদের মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে দেওয়া বক্তৃতায় মার্কিন নৌবাহিনীর সেক্রেটারি কার্লোস দেল তোরো বলেছেন, “চীন ধারাবাহিকভাবে দক্ষিণ চীন সাগর ও অন্যত্র আমাদের মিত্রসহ বিভিন্ন দেশের সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব লংঘনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
চীনকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রকেও তার বহরের আধুনিকায়ন করতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “তাদের এখন বড় নৌবহর, সেজন্য তারা সেগুলো বিশ্বব্যাপী মোতায়েন করছে। আমাদেরও বড় নৌবাহিনী দরকার, ভবিষ্যতে আমাদের আরও জাহাজ দরকার হবে, বিশেষ করে হুমকি মোকাবেলায় ভবিষ্যতে আমাদের আরও আধুনিক জাহাজ লাগবে।”
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) আসছে বছরগুলোতে তার যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা এখনকার ৩৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০তে উন্নীত করতে পারে বলেও দেল তোরো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জানিয়েছে সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের বহরে এখন যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা তিনশর নিচে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
গত গ্রীষ্মে প্রকাশিত মার্কিন নেভির নেভিগেশন প্ল্যান ২০২২ অনুযায়ী, পেন্টাগনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪৫ সালের মধ্যে সাড়ে তিনশ মনুষ্যবাহী যুদ্ধজাহাজ হাতে পাওয়া, যা ওই সময়ে চীনের বহরে থাকা জাহাজের তুলনায় অনেক কম থাকবে।
২০৪৫ সালের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে পুরনো অনেক নৌযান ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বহরের আকার আরও সংকুচিত হবে বলে গত নভেম্বরে দেওয়া মার্কিন কংগ্রেসনাল বাজেট দপ্তরের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দেল তোরো বলেছেন, মার্কিন নৌ জাহাজ নির্মাণ কারখানাগুলো চীনের কারখানাগুলোর উৎপাদিত নৌযানের সংখ্যা ও আকারের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
“তাদের ১৩টি জাহাজ নির্মাণ কারখানা আছে, কোনো কোনো কারখানার সক্ষমতা অনেক বেশি, একটি কারখানার সক্ষমতা আমাদের চারটি কারখানার সক্ষমতার তুলনায় বেশি। এটাই হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
কোথায় কোথায় চীনের ওই কারখানাগুলো আছে, সেগুলোর সক্ষমতা কেমন তা ভেঙে বলেননি দেল তোরো; তবে চীনা ও পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে চীনে ৬টি বড় ও দুটি ছোট নৌযান নির্মাণ কারখানা আছে বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি জাহাজ নির্মাণ কারখানা মার্কিন নৌবহিনী ও কোস্ট গার্ডের জন্য গভীর সমুদ্রে চলাচলে সক্ষম এমন যান বানান বলে সেন্টার ফর ন্যাশনাল ডিফেন্সের ব্রেন্ট স্যাডলারের অক্টোবরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কেবল জাহাজ নির্মাণ কারখানাতেই নয়, কর্মীসংখ্যা বিবেচনায়ও চীন এগিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন দেল তোরো। এর পেছনে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শ্রমকে প্রভাবিত করে এমন বিধিনিষেধ, নিয়মকানুন ও অর্থনৈতিক চাপ নেই, বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষ শ্রমিক। পাশাপাশি চীন এমন অনেক কিছুও করতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্র পারে না, বলেছেন মার্কিন নৌবাহিনীর এ সেক্রেটারি।
“তারা কমিউনিস্ট দেশ, মেনে চলতে হয় এমন নিয়মকানুন নেই তাদের। তারা জাহাজ বানাতে শ্রম দাসদের কাজে লাগাতে পারে, কিন্তু আমরা এমন করতে পারি না, আমরা এর বিরুদ্ধে, যে কারণে বর্তমানে তারা অনেকখানি এগিয়ে আছে,” বলেছেন তিনি।
দেল তোরোর এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে সিএনএন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
শ্রম দাস ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের সপক্ষে কোনো তথ্য বা উপাত্ত দেননি দেল তোরো; বিশেষজ্ঞরাও তার এ দাবি নিয়ে সন্দিহান।
“চীনের বিশাল জনশক্তি আছে, যে কারণে ব্যাপক প্রযুক্তির খাতগুলো, যেগুলো তাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত, সেখানে শ্রম দাস ব্যবহারের কোনো কারণ থাকতে পারেনি,” বলেছেন আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো ও ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিরক্ষা নীতি বিশেষজ্ঞ ব্লেইক হারজিংগার।
তবে দেল তোরোর মতে, চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র একটি দিকে এগিয়ে আছে, সেটি হচ্ছে, তাদের ‘জনগণ’।
“অনেক দিক দিয়ে আমাদের জাহাজ নির্মাতারা ভালো নির্মাতা, যে কারণে আমাদের নৌবাহিনী তাদের তুলনায় বেশি আধুনিক, বেশি সক্ষম এবং বেশি শক্তিশালী,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যরাও প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সেরা, বলেছেন দেল তোরো।
“তারা তাদের লোকদের যুদ্ধের জন্য জড়ো করে, আমরা মূলত তাদের চিন্তা করার প্রশিক্ষণ দিই।
“আমরা আমাদের মেরিন, নাবিক, সেনা, বিমানসেনা, মহাকাশ বাহিনীর সদস্যদের যে ধরনের প্রশিক্ষণ দিই, অন্যদের সঙ্গে তার মৌলিক পার্থক্য আছে, এটা আমাদেরকে চীন যা নিয়েই হাজির হোক না কেন, তা টপকে যাওয়ার মতো সুবিধা দেয়,” বলেছেন তিনি।