প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য যাদের দল-মতে ভিন্নতা রয়েছে, তাদের অবদানও কখনও ছোট করে দেখেনি আওয়ামী লীগ সরকার।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এ অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া। পাশাপাশি ২০২১-২২ সালের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সর্ব্বোচ্চ শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সদস্যদেরকে হাতে তুলে দেওয়া হয় পদক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গব্ন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া যোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের কল্যাণে সব ধরনের ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার নিচ্ছে।
“আমার এটাই চেষ্টা, যারা আমার বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের সম্মান করা, তাদের মর্যাদা দেওয়া, এটাই তো আমাদের কাজ। দল মত পৃথক থাকতে পারে, কিন্তু তাদের অবদানটা কখনো ছোট করে দেখিনি আমি। কখনো এটা নিয়ে অবহেলা করিনি।”
একটানা তিনবার ক্ষমতায় থাকতে পারায় দেশের মানুষের জন্য ‘কিছু কাজ করার সুযোগ পাওয়া গেছে’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা যারা একেবারে অবহেলিত পড়ে ছিল, আজকে আমরা খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের (কল্যাণে) সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের ভাতার ব্যবস্থা করা, কোনো মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে সে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মান পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। এমনকি তাদের দাফন কাফনের ব্যবস্থাটাও যাতে হয়, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।”
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “আপনাদের যে অবদান, মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবদান সেটা কখনো আমরা ভুলি না…। ভিত্তিটা তৈরি করে সামনের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধাদের যে দুর্দশায় পড়তে হয়েছিল, সে কথা প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরে।
“কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এই কথাটা বলবার মত কারো মনোবল তখন ছিল না। আর বললে পরে, হ্যাঁ… ক্ষমতাসীন অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের সাথে যারা হাত মিলিয়েছিল, তারা ভালো ছিল। সকলে তো এভাবে থাকতে পারে না।… কাজেই তাদের (মুক্তিযোদ্ধা) জীবন দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিল।”
জাতির পিতাকে হত্যার পর যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও বিকৃত করা হয়েছিল, সে কথা অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মনে হল যেন আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে নাই। এটাকে যেন পাকিস্তানের আরেকটা প্রদেশে রূপান্তর করার অপচেষ্টা।”
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
“প্রত্যেকটা উপজেলায় আমরা জায়গা দিয়েছি, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো যেন থাকে এবং ওই অঞ্চলে যে যুদ্ধ হয়েছে তার ইতিহাসটা যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা জানতে পারে, কারণ আমাদের বিজয়ের ইতিহাস জানলে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভেতরেও সেই ধরনের একটা উদ্দীপনা আসবে।”
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ ‘বদলে’ গেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পেরেছি, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন যখন করেছি, তখনই আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, উন্নত দেশে উন্নীত করতে হবে।”
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে ‘বিপদের’ কথাও অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।
“রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে সাথে আমেরিকা ইউরোপের স্যাংশান, যেটা আমাদেরকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে। আমাদানিকৃত পণ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।
“তারপরও আমরা থেমে নেই। দেশের মানুষের যেন কোনো কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সবাইকে আহ্বান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আমরা যেন আমাদের অর্থনীতির মন্দাটা কাটিয়ে চলতে পারি।”