দেশের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সংসদে। ব্যাংকে তাদের ঋণ স্থিতির পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর মোট খেলাপি ঋণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নে মঙ্গলবার সংসদে এ তথ্য উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শহীদুজ্জামানের প্রশ্ন ছিল- বর্তমানে দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা কম? এ ঋণ খেলাপির মধ্যে শীর্ষ ২০ জনের নাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাসহ তালিকা কী?
জবাবে অর্থমন্ত্রী ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডেটাবেইজে সংরক্ষিত (নভেম্বর ২০২২ মাসভিত্তিক) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপির তথ্য তুলে ধরেন।
এই তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫।
শীর্ষ ২০
সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
রিমেক্স ফুটওয়্যার: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এই অঙ্কের পুরোটাই খেলাপি ঋণ।
রাইজিং স্টিল কোম্পানি: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৯৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স: ঋণের স্থিতি ৯৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ।
রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার: তাদেরও ঋণের স্থিতি ও খেলাপির পরিমাণ একই, ৮৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
ক্রিসেন্ট লেদারর্স প্রডাক্ট:তাদেরও ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই ৮৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস: তাদেরও ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণ ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
সাদ মুসা ফেব্রিক্স: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
বি আর স্পিনিং মিলস: ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই, ৭২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এস এ অয়েল রিফাইনারি: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৭০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
মাইশা প্রপ্রাটি ডেভেলপমেন্ট: ঋণের স্থিতি ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৬৬৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল: ঋণের স্থিতি ৭৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৬৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
সামান্নাজ সুপার অয়েল: ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৬৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি: ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই, ৬৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
আশিয়ান এডুকেশন: ঋণের স্থিতি ৬৫৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ৬৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
এস এম স্টিল রি-রোলিং মিলস: ঋণের স্থিতি ৮৮৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৬৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স: ঋণের স্থিতি ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৬২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
এহসান স্টিল রি-রোলিং: ঋণের স্থিতি ৬২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৫৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
সিদ্দিকী ট্রেডার্স: ঋণের স্থিতি ৬৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বছর কয়েক ধরে সময়ে সময়ে বড় ঋণ পরিশোধে ছাড়সহ নানা সুবিধা দিচ্ছে সরকার। তবে খেলাপি ঋণের রাশ টানতে তা জোরালো ভূমিকা রাখছে না।
গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষকরা।