র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পুলিশের এ এলিট বাহিনীর কল্যাণেই দেশে এখন আর ‘সন্ত্রাসী নেই’।
তার ভাষায়, “এই র্যাব প্রতিষ্ঠার ফলে আপনার যে কাজটা হয়েছে যে, ইদানিং আমাদের দেশে সন্ত্রাসী নাই। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলা ছিল।
“সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশে নাই বলে শুধু আমাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। স্কুল কলেজের সেশন অন টাইমে হচ্ছে, কোনো ঝামেলা নাই। ব্যবসায়ী নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতেছে। অভিভাবকরা খুশি যে স্কুলে বাচ্চা গেলে ফিরে আসছে ঠিক টাইমলি। কোনো সন্ত্রাসীর ভয় নাই।”
জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন আছেন নিউ ইয়র্কে। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের প্রসঙ্গ আসে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, “যে ছয়জনের বিরুদ্ধে তারা… আমেরিকান সরকার... দিয়েছে, কী কারণে দিয়েছে সেটা জানতে চাই। ওরা আমাদের কোনো সঠিক, প্রিসাইজ কোনো তথ্য দেয়নি এখন পর্যন্ত। উই ডোন্ট নো।
“আর আমেরিকার একটা অভ্যাসও আছে, বিভিন্ন দেশে স্যাংশন দিয়ে থাকে। এটা তাদের ব্যাপার…। আমরা, উই হ্যাভ প্রুভড দ্যাট… র্যাব আমাদের দেশে সন্ত্রাসী বন্ধ করে দিয়েছে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শুধু আমার দেশে না, প্রতিবেশী রাষ্ট্র খুশি। কারণ সন্ত্রাসীর আতঙ্ক না থাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম। বাংলাদেশ ক্যানট বি আ হাব।
“কিছু কিছু দুষ্টু লোক তারা মনে করে, এই র্যাবের কারণে ও সরকারের বিশেষ অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসী হচ্ছে না, ঝামেলা করতে পারতেছে না। বিভিন্ন রকম প্রচারণা করছে।”
র্যাবের ওপর যারা ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করার দায়িত্বও তাদের মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আর তারা আমাদের বলেন নাই কেন দিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতেন যে, এই কারণে তাকে দেওয়া হল। এখনও পর্যন্ত আমরা সেই তথ্য পাইনি।”
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক প্রধান ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০০৪ সালে গঠিত র্যাবের বিরুদ্ধে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগ অনেক পুরনো। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে কঠোর সমালোচনাও করেছে।
আমেরিকা বহু দেশে শত শত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে মন্তব্য করে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এখানে আমাদের কথা বলেছি এবং তারা শুনেছেন। আমরা আশা করি...তারা একটা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
র্যাবের কারণে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি করার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্রও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলায় ৪৯৫টা বোমাবাজি, বিচারকের এজলাশে বোমা হামলা চালিয়ে দুই বিচারকের প্রাণহানি, একটি মাজারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা করে তাকে আহত করার পাশপাশি তার দুই সহকর্মীর মৃত্যু, গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ন আজাদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে একুশে অগাস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করার ঘটনাও মোমেন বলেন।
এসব সন্ত্রাস দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই দিন এখন ‘আর নাই।’
“আপনারা তখন শুনেছেন, প্রায়ই ক্লিন হার্ট অপারেশনে কত লোক গেল। ৫৫ জন লোক, ইয়াংম্যান, ২৭ বছর/২৮ বছরের লোক। মনে আছে এটা? নাকি ভুলে গেছেন?”