Loading...
The Financial Express

রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, ওষুধের দোকান কেন খোলা থাকবে: মেয়র তাপস

| Updated: August 31, 2022 17:28:36


রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, ওষুধের দোকান কেন খোলা থাকবে: মেয়র তাপস

স্বাস্থ্যমন্ত্রী একমত নন, চিকিৎসকরাও যৌক্তিকতা দেখেন না, তারপরও হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকান রাত ২টার পর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

তিনি বলেছেন, রাত দুইটার পর হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হলে ‘যৌক্তিক কারণ’ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।

মেয়র প্রশ্ন করেছেন, “রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে?”

মঙ্গলবার বিকালে দক্ষিণের নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের ষোড়শ করপোরেশন সভার সূচনা বক্তব্যে এ বিষয়ে কথা বলছিলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তাপস বলেন, “আমরা ঢাকা শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি সময়সূচি উপস্থাপন করেছি এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটা কার্যকর করতে চাই। সেখানে দোকান-পাট, বিপণি বিতান, কাঁচা বাজার, রেস্তোরাঁর রান্নাঘর ও খাবার সরবরাহ, চিত্ত-বিনোদনসহ প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদির জন্য সমসয়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

“এছাড়া ওষুধের দোকানগুলোর জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকানের জন্য আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছি এবং হাসপাতালের সাথে যে ওষুধের দোকান রয়েছে, সেগুলোকে রাত ২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।”

মেয়র বলেন, এর বাইরে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনায় ব্যাবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হয়, তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে।

“তার প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রম কেন অত্যাবশ্যকীয়, সেটার যথাযথ যুক্তি প্রদর্শন করতে হবে। আমরা সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রমকে বর্ধিত সময় দেব। কিন্তু ঢাকা শহরকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে আনতেই হবে।"

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে গত ২২ অগাস্ট ওই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

সেখানে ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রেও সময় বেঁধে দেওয়ার নির্দেশনা দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালের সঙ্গে থাকা ফার্মেসি সব সময় খোলা থাকা কতটা জরুরি, তা বোঝার জন্য কারও বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২৫ অগাস্ট এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, হাসপাতালের মত ওষুধের দোকানও জরুরি সেবার আওতাভুক্ত, এ কারণে ওষুধের দোকানগুলো সব সময় খোলা থাকবে।

ওষুধের দোকান বন্ধের সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে দেওয়া হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী সেদিন বলেন, “ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। ফার্মেসিগুলোর কথা হয়ত বলেছে, সেগুলো খোলা রাখার ব্যবস্থা নেব। আমরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিষয়টি তাদের (সিটি করপোরেশন) সঙ্গে আলোচনা করে সুরাহা করার জন্য।”

তবে দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস মঙ্গলবারও বলেন, হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে নানা মাধ্যমে আলোচনা হলেও করপোরেশনের সাথে কেউ কথা বলেনি।

“ঘোষিত গণবিজ্ঞপ্তির সময়সূচি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। শুধুমাত্র হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ওষুধের দোকানগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজন যারা আছেন, তারা কিন্তু আনাদের কাছে কোনও লিখিত আবেদন করেননি।"

সমালোচকদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, “হাসপাতালে সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না। কারণ, যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবারে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর, শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে?

“আগে তো চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই তো চিকিৎসা সেবার জন্য ঔষধের দোকান খোলা রাখতে হবে। তারপরও কোনো হাসপাতাল থেকে যদি লিখিত কোনো আবেদন আসে, আমরা অবশ্যই সেটা বিবেচনা করব।"

সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ঘোষিত সময়সূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র তাপস বলেন, “আপনারা অবশ্যই এ সময়সূচি নিশ্চিত করবেন। এলাকা, পাড়া-মহল্লায় যাতে সকলেই সূচি মেনে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে, সেটি নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় হলে আমরা আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেব। সে লক্ষ্যে আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।”

ওই সময়সূচির সাথে করপোরেশনের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম এবং নগরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ‘ওতপ্রোতভাবে’ জড়িত মন্তব্য করে মেয়র বলেন, “শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই একটি শহরকে পরিচালনা করা যায় না। তার সাথে সাথে আনুষঙ্গিক যত বিষয় রয়েছে, সেগুলোরও সংযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট সময়সূচির সাথে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা জড়িত।

“যখন সবকিছু একটি সূচির আওতায় আসবে তখন আমরা কার্যক্রমগুলো আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারব। ঢাকাবাসীকে ফলপ্রসূ ও কার্যকর সেবা প্রদানের পাশাপাশি একটি উন্নত ঢাকা উপহার দিতে পারব।”

করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ স্বাগত বক্তব্য দেন। কাউন্সিলররাও বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

Share if you like

Filter By Topic