পৌষের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া শীতের দাপটের তীব্রতা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আরও বেড়েছে মাঘের শুরুতে; পারদ নেমেছে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা দেশে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
শুক্রবার সকাল ৬টায় শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া কার্যালয় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। কয়েকদিন ধরেই এ জেলার উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং যা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
হাড়কাঁপানো এ শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শ্রীমঙ্গলের জনজীবন। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন চা বাগানের শ্রমিক ও ছিন্নমূল মানুষেরা। পাশাপাশি বেড়াতে আসা পর্যটকরাও ‘বিপদেই’পড়েছেন।
মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার এ তথ্য ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরও প্রকাশ করেছে। শুক্রবার গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ১৯.২ এবং ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪.০ ও সর্বনিম্ন ১২.৩ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে এ মৌসুমে গত ১০ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছিল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
আর এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। সেদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা সব রেকর্ড ভেঙে নেমে এসেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
শুক্রবার শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শ্রীমঙ্গলের উপর দিয়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ বয়ে চলছে। শুক্রবার সকাল ৬টায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়ার্স রেকর্ড করা হয়েছে। এটি শ্রীমঙ্গলের ও দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রাও।
জেলার আবহাওয়া কার্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, পৌষের মাঝ নাগাদ শীত শুরু হলেও তীব্র শীতের দাপট শুরু হয় মাঘের শুরুতেই।
তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগেও কুয়াশা ছিল। সেই কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিললেও জেলা জুড়ে হিমেল হাওয়া বইছে। এতে কনকনে ঠান্ডা অনুভুত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন চলবে।”
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
কাঁপন ধরানো এ শীতে বয়স্ক-শিশুরা ভুগছে বেশি। উপজেলার সবুজবাগ এলাকার ষাটোর্ধ্ব সুমতি মালাকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “এত শীত অনেকদিন দেখি নাই। সকালে উঠে পানিতে হাত দেওয়া যায় না। চলাফেরা কাজকর্ম করা অনেক কষ্ট।”
একই এলাকার কৃষক সুবোধ মালাকার বলেন, “সকালে মাঠে এসে কাজ করতে পারি না আর। হাত দিয়ে যাই ধরি পড়ে যায়।”
এলাকার শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণের কাজ চলছে জানিয়ে জেলা প্রশাকব মীর নাহিদ আহসান বলেন, “শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর দুঃস্থদের মধ্যে ৩০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে, যে কাজ অব্যাহত আছে।”
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ভোলা ও রংপুর বিভাগের উপর থেকে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।