একদিন আগে ঢাকার মোহাম্মদপুরে যে দম্পতির লাশ মিলেছিল, তাদের মধ্যে সৌদি প্রবাসী স্বামী আবদুল্লাহ আল নোমানের দেশে ফেরার কথা অজানা ছিল তার পরিবারের কাছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তবে তার স্ত্রীর পরিবার তার দেশে আসার খবর জানত। নোমান দেশে ফিরেই স্ত্রী শামীমাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।
রোববার রাতে ওই বাসা থেকে দুজনকে মৃত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। নোমানের পরিবার তখন জানতে পারে, গেল ৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেছেন তিনি।
দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সোমবার মোহাম্মদপুর থানায় আলাদাভাবে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যার পর নোমান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। সে কারণে একটি হত্যা মামলা এবং আরেকটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। হত্যা মামলায় নোমানের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
শামীমার বড় ভাই গাড়ি চালক শামীম আহমেদ থাকেন উত্তরায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর তার ভগ্নিপতি সৌদি আরব থেকে দেশে এসে ভোলায় গ্রামের বাড়ি চলে যান।
তবে ভোলায় তাদের বাসায় না গিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর ফোনে তার বোনকে ডেকে নেন। ওই দিনই তারা ঢাকায় চলে আসেন।
“ঢাকায় আসার জন্য লঞ্চে উঠার পর শামীমা আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, তারা ঢাকায় বেড়াতে যাচ্ছে। কয়েকদিন থেকে ফিরে আসবে।”
ঢাকায় আসার পরেও তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে জানিয়ে শামীম বলেন, শামীমা তাকে বলেছিলেন, তারা একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন এবং সেখানে কিছুদিন থেকে ভোলায় ফিরে যাবেন।
শামীম বলেন, নোমান ছুটিতে দেশে এসে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেই তিনি ধরে নিয়েছিলেন। এর বাইরে অন্য কিছু তার মনে হয়নি।
“আমার সাথে শামীমার যোগাযোগ ছিল, কিন্তু স্বামীর সম্পর্কে কিছু বলেনি বা কোনো অভিযোগ করেনি।”
তবে সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করা নোমানের দেশে ফেরার কথা জানা ছিল না বলে দাবি করলেন ফুপা কামাল হোসেন। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে নোমানের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, সেটা তিনি জানতে পেরেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমককে কামাল বলেন, “নোমানের বাবা-মা অসুস্থ। দেশের বাইরে থাকা অবস্থায়ও বাবা-মার সাথে তেমন যোগাযোগ রাখত না নোমান। বাবা-মাকে টাকা পয়সা পাঠানোর কোনো তথ্যও আমার জানা নেই।”
নিজেদের মধ্যে পরিচয়ের সূত্র ধরে নোমান ও শামীমা পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন বছর খানেক আগে। ভোলায় একই কলেজে তারা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে নোমান সৌদি আরবে চলে যান। বিয়ের সময় এসে দুই-আড়াইমাস পরে ফের প্রবাসে চলে যান।
এবারও তিনি দেশে ফিরে ভোলায় গিয়েছিলেন বলে জানান শামীম। তবে সেই তথ্যে সন্দেহ প্রকাশ করে কামাল হোসেন বলেন, “এলাকায় এলে কারও না কারও সঙ্গে তো দেখা হওয়ার কথা। কিন্তু এমনটা তো কেউ বলেনি।”
শামীমার পরিবারের এক সদস্য নিজেদের মধ্যে আলাপে বলছিলেন, নোমানের কাছে এলাকার কিছু লোক টাকা পাবে। সেই টাকার জন্য পাওনাদাররা কিছুদিন আগে নোমানের খোঁজে তার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল।
তখন কামাল হোসেন বলেন, “নোমানের কাছে কেউ টাকা পেলে প্রথমে তার নিজের বাড়িতে পাওনাদারদের যাওয়ার কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ তার বাড়িতে গেছেন, এমন কিছু শুনিনি।”
দেশে এসেও পরিবারকে না জানানো, পাওনাদারদের এড়াতে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়াসহ যেসব বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা চলছে, সেসব নিয়ে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, “সবটাই তদন্তের বিষয়। আমরা তদন্ত করে সত্যটা বের করার চেষ্টা করব।”
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বাবর রোডের যে ফ্ল্যাট থেকে নোমান ও শামীরার মৃতদেহ উদ্ধার করে, সেখানে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। মেঝেতে শুধু একটি ম্যাট্রেস ছিল।
ওই ম্যাট্রেসে শামীমার মৃতদেহ পড়ে ছিল, তার নাক ও মুখে ছিল রক্ত। আর নোমানের মৃতদেহ সিলিং থেকে ঝুলছিল।
ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী সাংবাদিকদের বলেছেন, এ মাসের মাঝামঝি সময়ে ওই দম্পতি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন, তবে তখন তারা জাতীয় পরিচয়পত্র দেননি।
“সকালে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা, কিন্তু রাত পর্যন্ত না দেওয়ায় খোঁজ নিতে গিয়ে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।”