প্রথমে কোভিড মহামারী, পরে বন্যার কারণে দুই দফায় নির্ধারিত সূচি থেকে সাত মাস পিছিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসেছে বিশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে সকাল ১০টার পরিবর্তে বৃহস্পতিবার এই পরীক্ষা শুরু হল বেলা ১১টায়। পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা হচ্ছে দুই ঘণ্টার। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টি আর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে পানি জমতে দেখা যাওয়ায় পরীক্ষার্থীদের সময় নিয়ে পরীক্ষার হলে রওনা দেওয়ার অনুরোধ করেছিল ট্রাফিক পুলিশ। তাছাড়া নিত্যদিনের যানজটের অভিজ্ঞতা থেকে আগেভাগেই কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই রাজধানীর স্কুলগুলোর সামনে পরীক্ষার্থীদের জটলা দেখা যায়। তাদের সঙ্গে অভিভাবকরাও ভিড় করেন কেন্দ্র এলাকায়।
মিরপুরের এমডিসি মডেল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় বসে শেষ মুহূর্তের পড়ায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল।
পরীক্ষা শুরু আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশনা থাকলেও অনেক পরীক্ষার্থীকে এর পরেও ঢুকতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও দেরি হওয়ার কারণ একটি খাতায় লিখে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
কেন্দ্রের বাইরে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের ব্যস্ত থাকতে হয়েছে অভিভাবকদের জটলা সরানোর কাজে।
এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসাইন জানান, তাদের কেন্দ্রে কালশী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আদর্শ বিদ্যাপীঠ, সুলতান মোল্লা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতন ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের মোট ২৪৭ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
“পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আমাদের সহযোগিতা করছে। কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।”
এ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিদ্যাপীঠের এক পরীক্ষার্থীর মা আলেয়া পরভীন বললেন, “পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশে কোনো সমস্যা হয়নি। পুলিশ অভিভাবকদের সরিয়ে দিয়েছে। আর স্কুলের দুই পাশ বন্ধ করে দেওয়ায় পরীক্ষার্থীরা সহজেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পেরেছে।”
কালশী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরোজা ইসলামসহ আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থী সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছিল।
পরীক্ষার প্রস্তুতি ভাল জানিয়ে আফরোজা বললো, “পরীক্ষার জন্য তো অনেক সময় পেয়েছি। প্রিপারেশন ভালোই। তবে টেনশনে ছিলাম বৃষ্টি নিয়ে। সকাল থেকে রোদ থাকায় মনটা ভালো হয়ে গেছে। পরীক্ষাও ভালো হবে ইনশাল্লাহ।”
বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষার্থী মাহফুজ আহমেদও একই সুরে কথা বললো।
“পরীক্ষা নিয়ে তেমন কোনো টেনশন নাই। শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা হচ্ছে। কয়েকবার রিভিশন দিয়েছি। দেখি কি হয়।”
-
দেশের ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে এবার মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে
-
স্কুল পর্যায়ের এ সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী।
-
এর মধ্যে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন নয়টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
-
তাদের মধ্যে বিজ্ঞানে ৫ লাখ ৮ হাজার ২৩৬ জন, মানবিকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৯১ জন, ব্যবসায় শিক্ষার ৩ লাখ ১ হাজার ৩৮৪ জন পরীক্ষা দিচ্ছে।
-
২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
-
১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ জন শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আধীনে এসএসসি ভকেশনাল পরীক্ষায় বসেছে।
-
এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী রয়েছে ৩৬৭ জন।
-
২০২১ সালের তুলনায় এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ জন।
দেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পুরো শিক্ষাসূচি পাল্টে যাওয়ায় গত বছর সাড়ে আট মাস পিছিয়ে নভেম্বরে এ পরীক্ষা নেয় সরকার।
একই কারণে এবার সাড়ে চার মাস পিছিয়ে গত ১৯ জুন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে স্থগিত হওয়া সে পরীক্ষা শুরু হল আরও তিন মাস পর।
মহামারীতে শিখন ঘাটতি থাকায় এবার পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সে কারণে পরীক্ষার সময়ও কমিয়ে করা হয়েছে দুই ঘণ্টা।
বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র- এই বিষয়গুলোতে পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের।
অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক আছে, সেগুলোতে ৪৫ নম্বরের (রচনামূলক ৩০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫ নম্বর) পরীক্ষা হবে। আর ব্যবহারিক না থাকলে ৫৫ নম্বরের (রচনামূলক ৪০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫) পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান- এই তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।
প্রতিটি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট এবং রচনামূলক প্রশ্নের জন্য ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় থাকছে। মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না।
দৃষ্টি, সেরিব্রাল পালসিজনিত এবং হাত নেই- এমন প্রতিবন্ধীরা পরীক্ষায় শ্রুতি লেখক নিয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে। এ ধরনের পরীক্ষার্থী ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় পাবে।
অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা রয়েছে এমন পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন; শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর সহায়তায় তারা পরীক্ষা দিতে পারবেন।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি।
-
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
-
শিক্ষার্থীরা নন-প্রোগ্রামেবল সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এর আগে জানিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়াতে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বরাবরের মতই।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো অনলাইনে সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখবে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কোন্য ব্যক্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিটি আগে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে।
কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তবে কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।