Loading...

ভিকারুননিসার ‘অধ্যক্ষের ফোনালাপে’ তোলপাড়, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

| Updated: July 27, 2021 14:45:55


ভিকারুননিসার ‘অধ্যক্ষের ফোনালাপে’ তোলপাড়, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

এক অডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনায় পড়েছেন ঢাকার নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার মুকুল।

ওই অডিওতে যার কণ্ঠে অবিরত গালাগালি শোনা গেছে, তা কামরুন নাহারের বলে দাবি করা হচ্ছে।

ভিকারুননিসার অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপু দাবি করেছেন, তার সঙ্গেই অধ্যক্ষের এই কথোপকথন হয়েছে।

এবিষয়ে কামরুন নাহারের কোনো বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম চেষ্টা করেও জানতে পারেনি। সোমবার তাকে অনেকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

তবে এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এডিট’করে ওই অডিও ক্লিপ তৈরি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এই ‘ষড়যন্ত্র’করেছে অভিভাবক ফোরাম ও পরিচালন পর্ষদ।

ভিকারুননিসায় ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম তদন্তের মধ্যে অধ্যক্ষের কথিত ওই ফোনালাপ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ওই অডিওতে নারী কণ্ঠে উত্তেজিত স্বরে পরিচালনা পর্ষদ ও অভিভাবক ফোরামের কাউকে উদ্দেশ করে অনবরত গালাগালি করতে শোনা যায়।

এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, “আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত।”

তদন্ত কমিটি করলে ‘দা দিয়ে’ কোপানোর হুমকির কথাও শোনা যায় ওই কণ্ঠে। এক সময়ে ‘রাজনীতি’ করার কথা বলে বলা হয়, “আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।”

এই কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসার অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপু সোমবার বলেন, গত ১০ জুন তার সঙ্গেই অধ্যক্ষের এই কথোপকথন হয়েছে।

“গত ১০ জুন অধ্যক্ষকে ফোন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে নানা ধরনের কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি গালাগালি করেন।”

এনিয়ে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য না দিলেও সোমবার রাতে ফেইসবুকে এক পোস্টে কামরুন নাহার নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক’পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, “কোন নোংরা ষড়যন্ত্র আর অসততার কাছে মাথা নুয়াতে শিখিনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের ছাত্রীদের সুযোগ্যভাবে গড়ে তোলাই আমার একমাত্র ব্রত।

“যারা স্বার্থে আঘাত লাগার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে আমার পেছনে লেগে আছেন, কিছু না পেয়ে এডিট করে তাঁরা একটি অডিও ছেড়েছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।”

এদিকে এই ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন ভিকারুননিসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকে।

অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মজিদ সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন অধ্যক্ষের মুখের ভাষা এরকম হতে পারে, এটা শুনে আমরা বিব্রত। আমরা অভিভাবকরা অডিওতে তার ভাষা শুনে খুবই মর্মাহত।”

তিনি বলেন, “শুরু থেকেই উনার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। উনি এ বছর জানুয়ারিতে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে কলেজের বাসভবনে থাকলেও তিনি কখনও নিজ অফিসে বসেন না। অভিভাবকরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও কারও সঙ্গে তিনি দেখা করেন না। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলারও অভিযোগ রয়েছে।”

গত ডিসেম্বরে ঢাকার মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে প্রেষণে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

গত ১৯ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে গরুর হাট বসিয়ে অনিয়ম করার অভিযোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অভিভাবকরা অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে বলে জানান আবদুল মজিদ।

যড়যন্ত্রের অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচিত সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন (মাধ্যমিক) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধ্যক্ষও তো গভর্নিং বডির একজন। আসলে উনি প্রতিষ্ঠানেই আসেন না। উনাকে গভর্নিং বডি থেকে প্রেশার দেওয়া হয়েছে, যাতে তিনি প্রতিষ্ঠানে আসেন। আসতে না পারলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। তারপরও উনার কাছে আমরা কোনো সাড়া পাইনি।”

ফোনালাপটির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমানকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, অডিওটি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন।”

এ বিষয়ে শিক্ষা সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভিকারুননিসায় নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানা যায়।

ঈদের আগেই বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি করা হয়।

অধ্যাপক নেহাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভর্তি বাণিজ্য, উন্নয়নকাজে আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে গত ১৯ জুলাই আমরা একটা তদন্ত কমিটি করেছি। ঈদুল আজহা ও পরবর্তীতে কঠোর লকডাউন শুরু হল। এজন্য কাজ শুরু করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। লকডাউন শেষ হলে সরেজমিনে যাবেন তারা, সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেবেন।”

তবে অধ্যক্ষের সাম্প্রতিক ‘ফোনালাপ’র বিষয়টি জানলেও এর সঙ্গে এই তদন্তের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “এখনকার আলোচিত বিষয় আমাদের তদন্তের বিষয়ও না এবং বোর্ড সম্পৃক্তও নয়। এটা আলাদা বিষয়, মাউশি দেখবে।

“আমরা তদন্ত কমিটি করেছি ১৯ জুলাই একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে। ভর্তি প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। অডিট বিষয়েও আরেকটা তদন্ত হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

Share if you like

Filter By Topic