কোনো মানুষের সাথে নতুন পরিচিত হলে কোন জিনিসটি মনে সব থেকে বেশি ছাপ রেখে যায়? তার চেহারা, পোশাক নাকি তার সাথে কেমন কথাবার্তা হলো সেটা। উত্তর বিভিন্নভাবে ঘুরে এলেও শেষ অব্দি কিন্তু ব্যক্তিত্বে এসেই ঠেকবে। হ্যাঁ, ব্যক্তিত্ব এমনই এক জিনিস যার প্রভাব বড়সর ভাবেই আছে আমাদের সামাজিক জীবনে। পৃথিবীর নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ রঙের একটি একটি রঙ বটে এই ব্যক্তিত্বগুলি। জগতের কেউই হয়তো অন্য কারুর মতোন নয়, কিন্তু মোটের উপর রামধনুর সাতরঙে তাদের সাজানো যেতেই পারে।
বিজ্ঞানীরা নারী-পুরুষভেদে মানুষের ব্যক্তিত্বকে আলফা, বিটা, গামা, ডেলটা, ওমেগা, সিগমা এই ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা হয়েছে একটা মানুষ প্রতিদিনের কাজ কি করে সামলায় এবং অন্যদের মাঝে নিজেকে কি তুলে ধরে।
আলফা
আলফা নামটা শুনলেই মাথায় চলে এমন এক মানুষ যে সবেতেই ফিটফাট, কাজে কর্মে জুড়ি মেলা ভার। লাখো লোকের ভিড়েও এদের আলাদা করে চেনা যায়। এরা জন্মগত ভাবেই নেতৃত্ব দানের গুণাবলীর অধিকারী। আর এর অনুরাগীরাও তাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অনুসরণ করে। সে নিজেও জিনিসটি খুব করে উপভোগ করে।
আলফা ব্যক্তিত্বধারী পুরুষ বা মহিলা উভয়ই খুব সাহসী, উদ্যমী এবং আত্মবিশ্বাসী হয়। এরা যেকোনো কিছুইতেই অন্যদের ছাপিয়ে যেতে চেষ্টা করে। নিজ কাজ বা পরিকল্পনার শতভাগ ফলাফল বের করে নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর। এদের নেতিবাচক দিক হলো এরা কর্তৃত্ব ফলাতে চায় খুব। জনসমাজে অধিক চর্চিত ব্যক্তিরা প্রায়শই আলফা গণভুক্ত হন।
বিটা
নমনীয়, মিশুকে এবং দায়িত্ববান- এই তিন গুণের এক অপূর্ব সংযুক্তি হলো বিটা ব্যক্তিত্ব। এক কথায় জীবন সঙ্গী হিসেবে যেই আদর্শ খোঁজ হয়, তাতে এরা একদম খাপে খাপ। এদের কোনো চাইচাই ভাব নেই, খুব অল্পতেই এরা খুব খুশি। যেকোনো পরিবেশেই এরা নিজেকে বেশ মানিয়ে নিতে পারে। মিষ্টি স্বভাবের কারণে এদের সবাই ভালোবাসে। এরা মৃদুভাষী এবং বিশ্বাসী প্রকৃতির। অন্যের জন্য প্রায়শই নিজের স্বার্থটা ছেড়ে দেয়। তবে এরা একটুখানি নিজেদের লুকিয়ে রাখতে চায়। অনেক কর্মঠ হলেও কর্মজীবনে এরা একটু উপেক্ষিতই থাকে। খুব নরম পেয়ে অন্যেরা সুযোগ বুঝে এদের খুব বাজিয়ে নেয়।
নারীদের ক্ষেত্রে নিজের ভালো গুণগুলি এরা নিজেরা দেখতে পায় না। সবসময় মনে করে থাকে তার কাজে কোথাও খামতি আছে।
গামা
গামা প্রকৃতির মানুষ খুবই লাজুক হয়। শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাব, জীবনে লক্ষ্যভেদ করতে হোঁচট খায়। এরা পরিকল্পনা করে বিশাল, কিন্তু তার বাস্তবতা খুব ছোট। তবে এরা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।
ডেল্টা
এরা অন্তর্মুখী হয়, এদের আছে কঠিন রকম পরিশ্রম করার ক্ষমতা। শান্তিপ্রিয় এবং সুচারু রুচির অধিকারী। খুবই বুদ্ধিদীপ্ত, প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেরটা ভালো করেই বুঝে নেয়।
বিটাদের মতো এরাও বড় কাজ করে ফেললেও অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অপারগ হয়। এরা এটা মেনেই থাকে তাই নিজের প্রত্যাশার গন্ডি এদের সীমার মাঝেই থাকে।
ওমেগা
ওমেগা চরিত্রের মানুষ নিজের সম্পর্কে খুব ভালো জানে, তাই নিজের কাজ তো নিষ্ঠার সাথে করেই এবং তাতে নিজেকে সফলতার অনুপ্রেরনা দেয় সে নিজেই। তবে নারীরা একটু আবেগী হয় এবং উদ্বিগ্নতায় ভোগে।
যেকোনো কাজেই খুব দক্ষ এরা কিন্তু কখনোই অন্যের স্বীকৃতির পেছনে ছোটে না। এরা খুব বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে থাকে তবে কিনা এরা পড়ুয়া দলের মানুষ। এদের উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেক ধরনের বিষয়েই, তাই নানান কাজে ব্যস্ত থাকতে খুব ভালোবাসে।
সিগমা
এরা নিজের রাজ্যের রাজা। সোজা বাংলায় সব খানে তাদের জমিদারি ভাব। সমাজ বা পরিপার্শ্বকে থোড়াই পাত্তা দেয়। এদের ব্যক্তিত্ব সবার থেকে আলাদা। এরা চলে একদম নিজের মর্জিতে। খুবই জেদি প্রকৃতির। এদের দৃষ্টি সামাজিক বৃত্তের ওপারে। এদের মস্তিষ্ক অসম্ভব রকমের শাণিত। কারো ধার ধারে না, কতেক আলফারাও এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়। যেইখানে যেই চাল ফেলুক না তা ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। যার ফল আগে থেকে অনুমেয় তাতে এদের রুচি কম, বরং রোমাঞ্চকর কিছুতেই বেশি উৎসাহী।
নিজেদের কোনোরকম ছকে বেঁধে রাখে না এরা। আপন গন্ডিতে এরা সিংহের সমান। সিগমা নারীরা জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা পাই টু পাই মনে রাখে এবং সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিতে চায়। এরা নিজেকে বিজয়িনী দেখতে চায়।
সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।