ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিমুখে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী কলকাতা।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, বিজেপি’র নবান্ন অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নগরী ঘিরে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। কিন্তু তাতেও পিছপা হননি বিজেপি কর্মীরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বেলা যত গড়িয়েছে বিজেপি তত নানা দিক থেকে মিছিল নিয়ে নবান্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পুলিশও তাদের বাধা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করেছে। ফলে সকাল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনার পারদও চড়তে থাকে।
দিনের শুরুতেই বিরোধীদলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী আটক হন বলে জানায় এনডিটিভি। এছাড়ও, স্থানীয় বিজেপির আরো বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মিছিল থেকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের মধ্যে বিজেপি এমপি লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রাহুল সিনহাও আছেন।
এনডিটিভি জানায়, শুভেন্দু, লকেট, রাহুলসহ বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা মিছিল নিয়ে নবান্নের দিক এগুতে চাইলে পুলিশ তাদের দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজের কাছে আটকে দেয় এবং একটি পুলিশ ভ্যানে করে ওই নেতাদের লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাওড়া ব্রিজের কাছে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল এবং জলকামান ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। সেখানে কয়েকজন আহত হন।
রানিগঞ্জেও বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিজেপি নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। ‘নবান্ন অভিযানে’ অংশ নিতে পুরো পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির শত শত কর্মী-সমর্থক মঙ্গলবার সকালে কলকাতা এবং কাছের হাওড়ায় পৌঁছান।
বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীদের আনতে বিজেপি আস্ত ট্রেন ভাড়া করেছিল বলে জানায় আনন্দবাজার। তারা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে কর্মীদের আনতে তিনটি এবং দক্ষিণের জন্য চারটি ট্রেন ভাড়া করে।
যদিও অভিযোগ উঠেছে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে বিজেপি কর্মীদের ট্রেন ধরতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। স্টেশনে ব্যারিকেড দিয়ে রাখার অভিযোগও করেছেন বিজেপি কর্মীরা। যা নিয়ে কোচবিহার, তুফানগঞ্জ, মালবাজার ও শিলিগুড়ি জংশনে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে শাসক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি কর্মীরা।
কলকাতায় জারি ছিল কড়া নিরাপত্তা। সাঁতরাগাছির কাছে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। সেখানে রাস্তা খুঁড়ে লোহার বিম ঝালাই করে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল সীমিত করা হয়। বিজেপির অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্ট্র্যান্ড রোডেও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যার জেরে সাধারণ মানুষকে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
নগরীর নানা প্রান্তে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ যখন তুঙ্গে তখন স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীয় ঘোষ নবান্ন অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বলে জানায় আনন্দবাজার।
যদিও তার ওই ঘোষণা নিয়ে দলের মধ্যেই তৈরি হয় সংশয়। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার জানিয়ে দেন, তার অবস্থান ধর্মঘট চলবে। পরে পুলিশ সুকান্তকে আটক করে।
শুভেন্দুকে পুলিশ যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গকে উত্তর কোরিয়ায় পরিণত করেছেন’।
বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতি তার জনগণের সমর্থন নেই। তাই তিনি বাংলায় উত্তর কোরিয়ার মতো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছেন। পুলিশ যা করছে তার খেসারত দিতে হবে। বিজেপি আসছে।”