নিপা: মায়ের অ্যান্টিবডি পেয়েছে সন্তানও


FE Team | Published: January 24, 2023 19:35:15 | Updated: January 27, 2023 18:21:14


নিপা: মায়ের অ্যান্টিবডি পেয়েছে সন্তানও

নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি মায়ের কাছ থেকে সন্তানের পাওয়ার প্রথম নজির পেয়েছেন আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানীরা।

এ বিষয়ে তাদের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’ সাময়িকীতে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ফরিদপুরে বছর পাঁচেকের এক কন্যাশিশু এবং তার মা নিপা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। পরে শিশুটি মারা যায়, আর মা গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার শিকার হস।

২০২১ সালের নভেম্বরে ওই নারী আবার গর্ভধারণ করেন। পরের বছরের অগাস্টে ওই নারী একটি সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দেন।

নবজাতকটির নিপা সংক্রমণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল জানিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরীক্ষা করে র‌্যাপিড ও পিসিআর টেস্টে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।

“কিন্তু অ্যান্টি-নিপা আইজিজির একটি উচ্চ টাইটার পাওয়া যায়। এভাবেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মা থেকে সন্তানের মধ্যে নিপা ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি পৌঁছায়।”

এ গবেষণায় আটজনের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ইমার্জিং ইনফেকশনস শাখার সহকারী বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ মইনুদ্দীন সাত্তার।

তিনি বলেন, “আমাদের জানা মতে, এই গবেষণাই প্রথম নিপা ভাইরাসভিত্তিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মা থেকে শিশুতে পরিবাহিত হবার প্রমাণ নিশ্চিত করে।”

মায়ের কাছ থেকে শিশুর শরীরে এই অ্যান্টিবডি কীভাবে যায়, এ প্রশ্নের উত্তরে ড. মইনুদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে মায়ের শরীরে অ্যান্টবডি তৈরি হতে হয়। মা কনসিভ করার পর কর্ড ব্লাড দিয়েই বাচ্চা নিউট্রেশন পায়। এই কর্ড ব্লাড দিয়েই অ্যান্টিবডিও বাচ্চার শরীরের যায়। অন্য রোগের অ্যান্টিবডিও হয়ত যায়।

“কিন্তু নিপা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে যাচ্ছে- সেই অ্যাভিডেন্স আমরা আগে কোথাও পাইনি। সেক্ষেত্রে নিপাহ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে যাওয়ার প্রমাণ এটাই প্রথম।”

নিপা এড়াতে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক কাথার পরামর্শ দিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন বলেন, সম্প্রতি মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

“এটি তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও করছে মানুষ। কিন্তু এটি যে কী ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস খাচ্ছে। রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক- এটি অনিরাপদ।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপা ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ, বাংলাদেশে এই হার ৭১ শতাংশ।

নিপা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলেও পরে গুরুতর স্নায়বিক জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এই জটিলতা আরও খারাপ হয়।

আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথমবারের মত নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৩৩১ জন নিপায় সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২৩৬ জনই মারা গেছেন।

Share if you like