Loading...

নিউ ইয়র্কে ছুরি হামলায় আহত সালমান রুশদি

| Updated: August 13, 2022 22:28:32


সালমান রুশদি।ছবি: রয়টার্স সালমান রুশদি।ছবি: রয়টার্স

স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাসের জন্য তিন দশকের বেশি সময় ধরে হত্যার হুমকি পেয়ে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে হামলার শিকার হয়েছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন বুকারজয়ী এই লেখক। যখন তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখনই এক লোক দৌড়ে স্টেজে উঠে ছুরি নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, ৭৫ বছর বয়সী রুশদির ঘাড়ে জখম হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে তার আঘাত কতটা গুরুতর, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

রুশদির মুখপাত্র অ্যান্ড্রু হোয়াইল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সালমানের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।” তবে তিনিও লেখকের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি।

হামলার ঘণ্টাখানেক পর এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল। তিনি বলেন, রুশদি জীবিত আছেন। এ ঘটনার তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।

মঞ্চে রুশদির পাশে থাকা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হেনরি রিজও মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তবে তার আঘাত গুরুতর নয়।

হুমকির মুখে নির্বাসিত লেখকদের আশ্রয় ও সহায়তা দেয়- এমন একটি অলাভজনক সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা হেনরি রিজ।

সোশাল মিডিয়ায় আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ঘটনার পরপরই দর্শকশ্রোতারা দৌড়ে মঞ্চে উঠে যান। হামলাকারীকে তারা ধরে ফেলেন।

স্থানীয় বাফেলো নিউজের একজন সাংবাদিক বলেছেন, কালো মাস্ক পরিহিত ওই হামলাকারী দর্শক সারি থেকেই উঠে এসেছিল।

ওই ব্যক্তি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে পুলিশের তরফ থেকে তার নাম পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

আহমেদ সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে, ভারত ভাগের ঠিক আগে আগে। ১৯৮১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের ছকে ফেলে জাদু বাস্তবতার মিশেলে লেখা তার সেই উপন্যাস ম্যান বুকার পুরস্কার জিতে নেয়। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটি বিক্রি হয় দশ লাখ কপির বেশি।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভ আর সহিংসতার মধ্যে বহু দেশে বইটি নিষিদ্ধ করে, রুশদির জন্মস্থান ভারতের সরকারই প্রথম সেই সিদ্ধান্ত নেয়।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি সে সময় এই লেখকের মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া ঘোষণা করেন। রুশদির মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৩০ লাখ ডলার। ইরানের সেই ঘোষণা এখনও বহাল আছে। পরবর্তীতে ইরান সরকার খোমেনির ওই ঘোষণার বিষয়ে আর আগে না বাড়লেও সরকার সমর্থিত একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে পুরস্কারের ওই অংকের সঙ্গে আরও ৫ লাখ ডলার যোগ করার ঘোষণা দেয়।

ভারতের একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও রুশদি নিজেকে একজন নিরীশ্বরবাদী হিসেবেই পরিচয় দেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার একজন কট্টর সমর্থক তিনি।

ইরান তার মাথার দাম ঘোষণা করার পর প্রায় দশ বছর একপ্রকার পালিয়ে থাকতে হয় রুশদিকে। এর মধ্যেই ১৯৮৯ সালে লেবাননের একটি ইসলামিক দল বইয়ের ভেতরে বোমা ভরে লন্ডনের এক হোটেলে পাঠায় রুশদিকে হত্যার জন্য। তবে বোমাটি আগেভাগে বিস্ফোরিত হওয়ায় হোটেলের দুটি তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হামলাকারী নিজেও নিহত হয়।

দীর্ঘদিন ব্রিটিশ সরকারের নিরাপত্তায় থাকার পর ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাস করতে শুরু করেন রুশদি। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও নেন।

২০০৭ সালে ব্রিটিশ রানী তাকে নাইট খেতাব দিলে পাকিস্তান ও ইরান তীব্র প্রতিবাদ জানায়। রুশদির অংশগ্রহণের কারণে বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনেও হামলার হুমকি দেওয়া হয়।

হুমকি মাথায় নিয়ে রুশদি নিজে বহু বছর অক্ষত থাকতে পারলেও স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের সঙ্গে জড়িত সবার ভাগ্যে তা ঘটেনি। বইটির নরওয়েজিয়ান প্রকাশক ৯০ এর দশকের শুরুতে আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন। আর জাপানি ভাষায় বইটির অনুবাদককে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়।

এই অনিশ্চিত জীবনের মধ্যেও রুশদি লেখা চালিয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত তার ১২টি উপন্যাস, তিনটি প্রবন্ধ সংকলন এবং শিশুদের জন লেখা দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

অনেকের বিচারে সমকালীন সাহিত্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান লেখক রুশদির পরবর্তী উপন্যাস ‘ভিক্টোরি সিটি’ আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাজারে আসার কথা রয়েছে।

Share if you like

Filter By Topic