সাফ সভাপতি হিসেবে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মাঠে থাকা কাজী সালাউদ্দিনের জন্য ছিল দায়িত্বেরই অংশ। বাফুফে সভাপতি হিসেবে মাঠে বসে ইতিহাসের স্বাক্ষী হওয়ার প্রবল তাড়নাও তার ছিল। তবে তার দাবি, বাংলাদেশকে দলকে চাপে ফেলতে চাননি বলেই শেষ পর্যন্ত নেপালে যাননি তিনি। পাদপ্রদীপের আলো থেকে মেয়েদের আড়াল করতে চান না বলে দলকে স্বাগত জানাতে বাফুফে সভাপতি যাবেন না বিমানবন্দরেও।
কাঠমান্ডুতে সোমবার নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। ফাইনালে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারী কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ মাঠে থাকলেও নেপালে যাননি বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন। দেশের ফুটবলের এমন মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের ফুটবল সংস্থার অভিভাবকের না থাকাটা বেশ কৌতূহলের জন্ম দেয়।
ফাইনালের পরদিন বাফুফেতে সংবাদ সম্মেলনে নিজের না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন সালাউদ্দিন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“একেকজন কাজ করে একেক স্টাইলে ও মানসিকতায়। আমি নেপালে যাওয়ার টিকেট তিনবার করে তিনবারই আবার বাতিল করেছি। ফাইনালে যাওয়া আমার কর্তব্য ছিল, সাফের সভাপতি হিসেবে আমি কাপটা দেব। কিন্তু অনেক চিন্তা করে, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেখলাম, আমি গেলে মেয়েগুলি বাড়তি চাপে পড়বে। কারণ তারা দারুণ ফুটবল খেলছে। যতটা সুন্দর খেলা যায়, সবই আছে। আমি গেলে ভালো হতে পারে, খারাপও হতে পারে। আমি গেলে যদি তাদের বাড়তি চাপ হয়… তাই সবাইকে বললাম, বাফুফেতে বসে খেলা দেখব।”
তার দাবি, নিজের কর্তব্যের চেয়েও দেশাত্ববোধ ও দেশের ফুটবলের প্রতি তাড়না তার মধ্যে কাজ করেছে বেশি।
“সাফ সভাপতি হিসেবে কাপ দেওয়াটাও আমার কর্তব্য। আমি গর্ব নিয়ে কাপটা দেব…কিন্তু এটার চেয়ে আমার দেশকে আমি বেশি ভালোবাসি। আমি চেয়েছি দলটা যেন জেতে। কারণ, এই দেশে ফুটবলের একটা ‘ব্রেক’ দরকার। আমরা খুব ভালো করছি না, ভালো করার চেষ্টা করছি। আমি তাই ওটাকে স্যাক্রিফাইস করেছি।”
শিরোপাজয়ী দল দেশে ফিরবে বুধবার দুপুরে। বিমানবন্দরে দলকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এরপর ছাদখোলা বাসে ঢাকা শহরের নানা প্রান্ত প্রদক্ষিণ করে দল মতিঝিল বাফুফে ভবনে যাবে। সেখানে তিনি দলকে অভ্যর্থনা জানাবেন, জানালেন বাফুফে সভাপতি।
“আমি মেয়েদের এখানে (বাফুফে ভবনে) অভ্যর্থনা জানাব। এরপর ওদের সঙ্গে বসে ভালো-মন্দ আলাপ করব। এয়ারপোর্টে যাওয়া আমার জন্য সুবিধা। আমার বাসা থেকে ১৫-২০ মিনিট। কিন্তু আমি এখানে থাকব। কালকে বিমাবন্দরে যাবে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির একটি দল, ক্রীড়ামন্ত্রী ও সচিব, স্পন্সরদের অনেকে। আমি এখানে দলকে রিসিভ করব।”
নেপালে না যাওয়ার মতো তার বিমানবন্দরে না যাওয়ার কারণও ফুটবলারদের প্রাধান্য দেওয়া। তার দাবি, এমন দিনে তিনি নিজে আলো কেড়ে নিতে চান না।
“কেন আমি ওখানে যাব না, কারণটা বলি… আমার খুব ইচ্ছা যাওয়ার, চ্যাম্পিয়ন কাপ নিয়ে এসেছে প্রথমবারের মতো… কিন্তু আমি ওখানে যদি যাই, আপনারা (সংবাদমাধ্যম) আমাকে অনেক প্রশ্ন করবেন, অনেক কিছু করবেন। তাতে হবে কী, মেয়েদের লাইমলাইট ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু কালকে মেয়েদের দিন। এটা সভাপতির দিন নয়, সাধারণ সম্পাদকের দিন নয়, সহ-সভাপতি, সদস্যদের দিন নয়।”
“আমি চাই মেয়েরা যেন এক্সক্লুসিভ আপনাদের আদর পায়, মিডিয়া কাভারেজ পায়। কারণ, আমরা জিতিনি, আমরা পেছন থেকে কাজ করেছি। কালকে লাইমলাইট যেন মেয়েরা পায়। ইংরেজিতে একটা কথা বলে, ‘ডোন্ট স্টিল হার থান্ডার।’ কালকে ওদের ওটাই, আমরা যেন ভাগ না নেই।”
বুধবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পা রাখবে চ্যাম্পিয়ন দল। বিমানবন্দরে এক দফা সংবর্ধনা দেওয়া হবে তাদের। তার পর ছাদখোলা বাসে ঢাকা শহরের নানা প্রান্ত ঘুরে মতিঝিল বাফুফে ভবনে যাবেন ফুটবলাররা। সেখানে আরেকদফা সংবর্ধনা দেওয়া হবে তাদের।