Loading...
The Financial Express

দর্শকদের সিনেমা হলে পাঠাতে ওটিটির ভূমিকা আছে?

| Updated: September 02, 2022 18:41:35


দর্শকদের সিনেমা হলে পাঠাতে ওটিটির ভূমিকা আছে?

ওটিটি সঙ্কুচিত করছে সিনেমা হলের বাজার, এমন কথাই বলা হচ্ছিল আগে; এখন বাংলাদেশে দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহমুখী হওয়া দেখে তার কৃতিত্বও দাবি করছেন ওটিটি সংশ্লিষ্টরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তারা বলছেন, মহামারীর মধ্যে মানুষ বিনোদনের নতুন এই দুনিয়ায় অভ্যস্ত যেমন হয়েছিল, তাতে নতুন নতুন শিল্পীদের সঙ্গে তারা পরিচিত হয়েছিল, আর টাকা দিয়ে দেখার অভ্যাসও গড়ে উঠেছিল, এই দুটোই মানুষকে সিনেমা হলে ফেরানোর নেপথ্য কারিগর।

তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাই এ যুক্তি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, ভালো সিনেমাই পারে দর্শকদের হলমুখী করতে। আর ওটিটির প্রভাব বুঝতে আরও সময় লাগবে।

করোনাভাইরাস মহামারীতে মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখন ওভার দ্য টপ (ওটিটি) শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই বিনোদন মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই জোয়ারে নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইমের মতো বাংলাদেশি কনটেন্ট নিয়েও গড়ে ওঠে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।

মহামারী পরিস্থিতির উন্নতিতে সিনেমা হল খুললেও দর্শক মিলছিল না, ওটিটিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মানুষ মজেছিল তাতেই।

তবে গত তিন-চার মাসের ঘটনাপ্রবাহ পাল্টে দিয়েছে হিসাব। রোজার ঈদে শান ও গলুই, কোরবানির ঈদে পরাণ, আর এর পর হাওয়া ভুলিয়ে দিয়েছে শুরুর প্রশ্ন। মুক্তির দেড় মাসের বেশি সময় পরও দর্শকের আগ্রহ ধরে রেখেছে রায়হান রাফি পরিচালিত পরাণ। ঝড়ো গতিতে শুরু হওয়া হাওয়াও ছুটছে একই গতিতে।

<div class="paragraphs"><p>দর্শকদের&nbsp;এই লাইন হাওয়া সিনেমা দেখতে</p></div>

দর্শকদের এই লাইন হাওয়া সিনেমা দেখতে|ফাইল ছবি

দেশের ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, নির্মাতা রেদওয়ান রনি মনে করেন, দর্শকের এই হলে ফেরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওটিটি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারীর প্রভাবে দীর্ঘদিন হল বন্ধ ছিল। ওটিটিতে যে নির্মাতা ও শিল্পীদের কনটেন্ট দেখেছেন, সেই শিল্পী-নির্মাতাদের সিনেমা দেখতে হলে ছুটছেন।”

নাসির উদ্দিন খানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ দর্শক ‘মহানগর’, ‘বলি’, ‘সিন্ডিকেট’সহ বেশ কিছু কনটেন্টে নাসির উদ্দিন খানের অভিনয় দেখে পছন্দ করেছেন। সেই নাসির উদ্দিন খান অভিনীত সিনেমা হলে মুক্তি পেলে দর্শক এ অভিনেতার টানেই হলে আসছেন।”

হইচই বাংলাদেশের জনসংযোগ ও বিপণন কর্মকর্তা ফয়সাল মাহবুবেরও একই মত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা সিনেমা থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময়ে ওটিটি প্লাটফর্মগুলো একের পর এক ভালো কনটেন্ট নির্মাণ শুরু করে।

“ওটিটিতে দর্শককে টাকা দিয়ে কনটেন্ট দেখতে হয়। ফলে তাদের টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার অভ্যাসটা ফিরে আসে। এরপর সিনেমা হল চালু হওয়ায় সেই অভ্যাসের টানেই দর্শক হলে আসছে।”

<div class="paragraphs"><p>সিনেপ্লেক্সগুলোতে এখন ভিড় বাড়ছে</p></div>

সিনেপ্লেক্সগুলোতে এখন ভিড় বাড়ছে| ফাইল ছবি

চরকির লিড অব কনটেন্ট মো. জাহিদুল হক অপু বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে একটু পেছনে ফিরে যান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশে যখন এফএম রেডিও জনপ্রিয় হয়ে উঠল, সংগীত জগতের অনেকে বলছিলেন- ক্যাসেট, সিডি আর বিক্রি হবে না। সবাই এখন রেডিওতে গান শুনবে। অথচ ঘটল এর উল্টোটা। এফএমের মাধ্যমে হাবীব, বালাম, জুলি, ন্যান্সি, মিনার, হৃদয় খানসহ বেশ কিছু শিল্পী উঠে এলেন। তাদের একটা দুইটা গান এফএমে শুনে দর্শক বাকি গানগুলো শোনার জন্য অ্যালবাম খুঁজতে শুরু করেন।”

ওটিটির ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটছে দাবি করে অপু বলেন, “ওটিটি দর্শকের ক্ষুধা তৈরি করে দিচ্ছে। সেই ক্ষুধাটা নিবারণ হচ্ছে হলে এসে।”

ওটিটির জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুনও মনে করেন, সিনেমা হলে দর্শকের জোয়ারের পেছনে ওটিটির ‘হাত’ আছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওটিটির কনটেন্ট দেখে দর্শক চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খানদের অভিনয় দক্ষতা জানছেন। মেজবাউর রহমান সুমন, রায়হান রাফিদের নির্মাণের ধারণা পাচ্ছেন।

“পরে যখন সেই রাফি, রাজদের সিনেমা যখন হলে মুক্তি পাচ্ছে, দর্শক হলে আসছেন। কারণ তারা জানেন, এই শিল্পী নির্মাতাদের থেকে কী ধরনের কাজ পাওয়া যায়।”

<div class="paragraphs"><p>নির্মাতা রেদওয়ান রনি ও অভিনেতা শরিফুল রাজ</p></div>

নির্মাতা রেদওয়ান রনি ও অভিনেতা শরিফুল রাজ|

তবে হালের আলোচিত অভিনেতা শরিফুল রাজ এসব যুক্তি মানতে নারাজ।

পরাণ ও হাওয়া সিনেমার এই অভিনেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওটিটি হল ব্যক্তিগতভাবে সিনেমা দেখার মাধ্যম। মানুষ বেডরুমে শুয়ে-বসে ওটিটির কনটেন্ট দেখে। এর দর্শকশ্রেণি আলাদা।

“সিনেমা হলের দৃশ্য আলাদা। এখানে বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি, পেশার মানুষ একসাথে বসে সিনেমা দেখে। সিনেমার ক্যানভাসটা বড়। আমার মনে হয় না, হলের দর্শক বৃদ্ধির সঙ্গে ওটিটির তেমন কোনো ভূমিকা আছে।”

রাজের মতে, ভালো সিনেমাই দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টানছে। আর একই সুর পাওয়া গেল বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা মিশা সওদাগরের কণ্ঠে

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিনেমা অনেক বড় বিষয়। ওটিটির ছোট পর্দায় সিনেমা দেখে মজা পাবে না দর্শক। সিনেমা দেখতে হলেই আসতে হবে।”

তার মতে, পরাণের গল্প দর্শকের মনে গেঁথে গেছে। হাওয়ার নির্মাণ আন্তর্জাতিক মানের বলেই দর্শক সিনেমা দুটি দেখছে।

“মহামারীর প্রাদুর্ভাব কমার পরপরই দর্শক হলে আসতে শুরু করেছে। শান ভালো দর্শক পেয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায়ই পরাণ দেখছে। হাওয়া দেখছে। একজন দর্শক যখন সিনেমা দেখে, অন্যদের কাছে প্রশংসা করছে, তারাও হলে আসতে প্ররোচিত হচ্ছে।”

পাল্টাপাল্টি এই যুক্তির মধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা আবু সাঈয়ীদ মনে করছেন, এ বিষয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।

তবে দুই মাধ্যমের তুলনা করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওটিটির কারণে নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। তারমধ্যে থ্রিলারধর্মী কাজই বেশি। কিন্তু বাংলা সিনেমার দর্শক প্রেম, সংঘাত, পারিবারিক গল্পের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত। ফলে ওটিটির থ্রিলারের দর্শক প্রেমের গল্প দেখার জন্য হলে আসছে বলে আমার মনে হয় না।

“আর চলচ্চিত্র বলেন আর ওটিটি বলেন, এটা বৈশ্বিক ব্যাপার। সারা বিশ্বে যেমন বড় বাজেটের সিনেমা হচ্ছে, তেমনি বড় বাজেটে ওটিটি কনটেন্টও নির্মিত হচ্ছে। এখনই এটা নিয়ে বলা কঠিন।”

Share if you like

Filter By Topic