ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১৫ দিনের ব্যবধানে ডজনে বেড়েছে ৩০ টাকা। গত সপ্তাহে ১৫ টাকা বাড়ার পর এই সপ্তাহেও আরও ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম আবার গিয়ে ঠেকেছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
ডিমের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগিও। ব্রয়লার ১৮০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা এবং সোনালী ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে লেয়ার মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা বাজার ঘুরে মুরগি ও ডিমের দামের এমন চিত্র পাওয়া যায়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মুরগির খামারি ও ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির খাদ্য ফিড ও ওষুধসহ অন্যান্য বাবদ ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বাড়ছে।
রামপুরার হাজীপড়ার আদিবা স্টোরের দোকানি আব্বাস আলী জানান, অগাস্টের ডিমের দাম বেড়ে ডজন দেড়শ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর দুই সপ্তাহ আগে দাম কমে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা হয়। এই দাম কিছুদিন স্থিতিশীল থাকলেও গত সপ্তাহে দাম বেড়ে প্রতি ডজন ডিম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হয়। এরপর ডজনে আরও ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে শুক্রবার থেকে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ডিমের পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহে ১০০ ডিম ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি হলেও তা বেড়ে এক হাজার ৫০ ছাড়িয়েছে বলে জানান তেজগাঁওয়ের জিলানী মার্কেটের ইসলামী ট্রেডার্সের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মো. ইসলাম।
তিনি বলেন, “বাজারে শাক-সবজির দাম বেশি হওয়ায় ডিমের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। মানুষ শাক-সবজি ও মাছ-মাংস কম খেয়ে ডিম বেশি কিনছে। যে কারণে চাহিদা বেড়ে দামও বেড়েছে।”
পাইকারি কাপ্তানবাজারে মুরগির দাম গত সপ্তাহের মত স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান এ বাজারের শাহীন হেনস হাউজের মালিক ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, “মুরগি দাম এমনিতেই এখন কিছুটা বেশি, এই কারণে চাহিদাও কিছু কমেছে। গত সপ্তাহের দামেই সব ধরনের মুরগি বিক্রি হচ্ছে। তবে আগামিতে মুরগি দাম কেমন হয় তা বলা সহজ না।”
মুরগি ও ডিমের দাম চড়া থাকার বিষয়ে খামারিরা বলছেন, মুরগির খাদ্যে, ওষুধ ও অন্যাদ্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়েছে।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকার মেসার্স তুহিন পোল্ট্রির মালিক সাকিউল আলম তুহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন একটু দাম পাচ্ছি। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দর চলছে। এই দর অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশিই। কারণ হল, মুরগির বাচ্চা দাম বেশি, ফিডের দাম অনেক বেড়েছে। ওষুধ, তুষের দাম বাড়তি। খামারের অন্যান্য খবরও বেড়েছে।”
সৈয়দপুরের ফারিশা পোল্ট্রির তত্ত্বাবধায়ক মো. নোয়াব মিয়া বলেন, “সবকিছুর দাম বেড়েছে, একইসাথে খামারের ব্যয়ও বেড়েছে। গরমকালে খামারে বহু বাচ্চা মারা যায়, একদিন বয়সী বাচ্চার দামও বেশি পড়ে। একই কারণে ডিমের উৎপাদন কমে যায়, যে কারণে বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম এখন কিছুটা বেশি।”
রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা ও একটি বীমা কোম্পানিরকর্মী মো. জামাল হোসাইন বলেন, “বাজারে গেলে দেখি সবকিছুর দামই আকাশচুম্বী, যা কিনতে যাই তাতেই নতুন বাড়তি দাম। হিসাব করেও কুলানো যাচ্ছে না। প্রয়োজনের চেয়েও কম কিনে ঘরে ফিরতে হয়। এভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না।”
মাছের দরও চড়া
ডিম ও মুরগি ছাড়াও বাড়তে শুরু করেছে কিছুটা কম দামে কেনার সুযোগ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাজার তালিকার প্রথমে থাকা পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, দুই থেকে তিন মাস আগে পাঙ্গাস মাছ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও সেগুলো এখন কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি।
অপরদিকে তেলাপিয়া মাছ কয়েক মাস আগে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা এখন দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
রামপুরা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী ফরিদুল হুদা জানান, কম আয়ের মানুষজন হয় পাঙ্গাস, না হয় তেলাপিয়া কেনে। এগুলোর দাম বাড়ায় এখন বিক্রিও কিছুটা কমেছে।
অন্যান্য মাছের মধ্যে রুই ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাতল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, বেলে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।