প্রায় এক দশকের স্থবিরতার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ এই প্রথম ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকায় কোরীয় দূতাবাস জানিয়েছে, এই উল্লম্ফনের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি।
গত বছর দুই দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পাল্লাটি অবশ্য কোরিয়ার দিকে বেশ ভারী। কোরিয়া বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য, বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ায় গেছে ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
কোরীয় দূতাবাস জানিয়েছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে মোট আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০২১ সালে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে কোরিয়ার রপ্তানি ২০২১ সালে ছিল ১৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। সে তুলনায় ২০২২ সালে বেড়েছে ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২১ এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি বাড়ার প্রধান কারণ ছিল ডিজেল। ২০২২ সালে এই জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৭০৩ দশমিক ৮8 শতাংশ বেড়েছে।
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। সেই প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালে কোরিয়া থেকে ৯৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের ডিজেল আমদানি করে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এই আমদানি ছিল ১২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের। অবশ্য ২০২১ সালেও ডিজেল আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৪৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বাংলাদেশে অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ২০২২ সালে যন্ত্রপাতি, পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, ইস্পাত ও কীটনাশকের রপ্তানি কমার কথা জানিয়ে কোরীয় দূতাবাস বলছে, “ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দেশের রিজার্ভ ঠিক রাখতে বাংলাদেশ সরকারের আমদানি বিধিনিষেধ এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।”
দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ক্রমাগত বেড়েছে, যা ২০০৭ সালে প্রথমবার ১০ কোটি ডলার, ২০১১ সালে ২০ কোটি ডলার এবং ২০১৩ সালে ৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল। তবে পরের প্রায় এক দশক এটি স্থবির ছিল এবং ২০২০ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল।
“কোভিড-১৯ মহামারীর বিরূপ প্রভাবের কারণে ওই বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৩৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারে নেমেছিল। তবে, ২০২১ সাল তা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫৫ কোটি ২ লাখ ডলারের বড় অর্জন প্রত্যক্ষ করেছে।”
কোরীয় দূতাবাস জানিয়েছে, কোরিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, খেলাধুলা ও অবকাশ যাপনের সামগ্রী ও ব্রোঞ্জ স্ক্র্যাপ।
২০২২ সালে কোরিয়ায় মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ২ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। দেশটিতে গত বছর রেকর্ড ৫৩ কোটি ৬ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য গেছে বাংলাদেশ থেকে। আগের বছরের তুলনায় এই খাতে রপ্তানি বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এছাড়া, কাগজ ও খাদ্য পণ্যের রপ্তানিও যথাক্রমে ১৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্রোঞ্জ স্ক্র্যাপের রপ্তানি ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার হয়েছে।
দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি ২০১১ সালে ছিল ১৬৩ কোটি ডলার। প্রায় এক দশক ধরে তা ১২০ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন এটি ১০৩ কোটি ডলারে নেমে যায়।
“এক দশকের স্থবিরতার পরে, এটি অবশেষে ২০২১ সালে আবার ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ডলারে এসে দাঁড়ায়। যা আগের বছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।”
বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং কুন বলেন, “২০২৩ সাল কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী, যা কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসবে।”
দুই দেশের ব্যবসায়িক খাত বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়ার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য নীতির সুবিধা নেবে- এই আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “কোরিয়ার বাজারে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। কোরিয়ার নন-ট্রেডিশনাল বাজারে রপ্তানি করলে বাংলাদেশ সরকার থেকে অন্তত ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রাপ্তির সুবিধা থাকে।”