তাইওয়ানে আক্রমণ চালানো থেকে চীনকে দূরে রাখতে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।
একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে তাইপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে বলে এ সংক্রান্ত আলোচনা সম্বন্ধে অবগত একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ওয়াশিংটনের ভাবনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতদের সঙ্গে তাইপের পৃথক পৃথক লবিং এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে, বলেছে সূত্রগুলো।
তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি তাইওয়ান প্রণালী ঘিরে যেভাবে সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে, তাতে স্বশাসিত দ্বীপটিতে চীনের আক্রমণ চালানোর শঙ্কাও বাড়ছে, তারই প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলো এরইমধ্যে কম্পিউটার চিপস ও টেলিকম সরঞ্জামসহ সংবেদনশীল প্রযুক্তি খাতে চীনের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; এসব বিধিনিষেধ তো থাকছেই, তার সঙ্গে আরও আরও খাতে নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবা হচ্ছে।
কোন কোন খাতে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে, সূত্রগুলো সে বিষয়ে কিছু বলতে না পারলেও, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের অন্যতম বড় লিংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর আদৌ সম্ভব হবে কিনা, বিশেষজ্ঞরা তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন তুলছেন।
“যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা চীনের অর্থনীতির সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার তুলনায় চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করাটা তাদের জন্য অনেক অনেক বেশি জটিল হবে,” বলেছেন মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাজাক নিকাখতার।
চীন তাইওয়ানকে তার একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে। স্বশাসিত দ্বীপটিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর গেল মাসে তারা তাইওয়ানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে এবং এর অনানুষ্ঠানিক সমুদ্রসীমার আশপাশে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়।
পেলোসির সফরকে বেইজিং তাদের বিরুদ্ধে উসকানি হিসেবে দেখেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার তাইওয়ানকে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, এজন্য বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। আগামী মাসে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে তাকে তৃতীয়বার ৫ বছরের জন্য নেতা নির্বাচিত করা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তাইওয়ান চীনের অংশ, স্বশাসিত দ্বীপটির সরকার তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
শি যেন তাইওয়ানে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা না করেন সেজন্য ওয়াশিংটনে থাকা কর্মকর্তারা বেইজিংয়ের ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ নিয়ে ভাবছেন বলে এক মার্কিন কর্মকর্তা ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকা একটি দেশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর থেকেই চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কথাবার্তা শুরু হলেও পেলোসির সফরের পা্ল্টায় চীনের প্রতিক্রিয়ার পর ওই তাগিদ আরও বেড়েছে, বলেছে দুটি সূত্র।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো মিত্ররা রাশিয়াকে থামাতে ব্যাপক মাত্রার নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলেও তা মস্কোকে দমাতে পারেনি। পরের মাসেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনে তার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ একটি দেশের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, হোয়াইট হাউস এখন বেইজিংকে উসকে না দিয়েই তাইওয়ান বিষয়ে যত বেশি সম্ভব দেশকে এক কাতারে আনা যায়, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিয়েছে।
কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদের বিবেচনায় আছে, সে বিষয়ে রয়টার্স কিছু জানতে না পারলেও যুক্তরাষ্ট্র চীনের সামরিক বাহিনীকে ‘টার্গেট’ করতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞের ইঙ্গিত।
হোয়াইট হাউস এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা চীনের সাম্প্রতিক যুদ্ধমহড়া এবং তাইওয়ানের জন্য চীন যে ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তা এবং ওই অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও একই ধরনের মনমানসিকতা সম্পন্ন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি তারা।
এ প্রসঙ্গে রয়টার্স চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনের চীন দূতাবাসের মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।