Loading...

চা পানের বিশেষ কিছু ঐতিহ্য

| Updated: June 29, 2022 20:33:32


জাপানি চা পানের প্রস্তুতি। ছবি: রাফ গাইডস জাপানি চা পানের প্রস্তুতি। ছবি: রাফ গাইডস

বাইরে ঝুম বৃষ্টি। এক কাপ ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় রাখা চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে...হালকা চোখ বুজে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বৃষ্টির গান শুনতে থাকা। একটু আরাম করে বসে চা না খেলে চায়ের তৃপ্তিটা যেন ঠিক আসে না।

অবসাদ দূর করা বা মানসিক প্রশান্তি বা হোক না কেন কেবলমাত্র অভ্যাসের বশেই মানুষ প্রায় ৫,০০০ বছর ধরে চা পান করে আসছে। চা পানের প্রচলনটা শুরু হয়েছিল সেই সুদূর চীনে, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

চা বলতে তো আমরা বুঝি ঐ তো, “মামা, বেশ কড়া কইরা একখান রং চা দ্যান তো” বা “মামা, ঘন দুধের এক কাপ চা দিয়েন তো।“ কিন্তু বিশ্বজুড়ে এর বাইরেও অনেকভাবে অনেক রকম চা বানানো হয়।

চীন

চায়ের জন্মস্থান এই  চীনে চা তাদের সংস্কৃতির একটি অংশবিশেষ-এটা বলা যেতে পারে। চীনে চা বানানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিকে বলা হয় ‘গংফু চা’। বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে চা পাতা (প্রসেসড করা নয়) ব্যবহার করে চা তৈরি করা হয় এবং খুব সুন্দর চাইনিজ টি সেটে করে চা পরিবেশন করা হয়। ওদেশে অনেকটা উৎসবের আমেজে চা পান করা হয়।

চীনের ফেংহুয়াং পাহাড়ের বুকে যে চা গাছগুলো দেখা যায়, সেগুলোর বয়স প্রায় ৭০০ বছরের কাছাকাছি।

তাইওয়ান

১৯৮০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে ‘বাবল টি’ বেশ সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এটি মূলত তাইওয়ানের একটি জনপ্রিয় পানীয়।

চা, দুধ, ফলের রস এবং ট্যাপিওকা বল (বোবাও বলে অনেকে)-এই চারে মিলে তৈরি হয় বাবল টি। বিভিন্ন ফলের রস ব্যবহার করা হয় তাই এই চা অনেক রকম ফ্লেভারের হয়।

পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাধারণত ট্রান্সপারেন্ট বা ‘স্বচ্ছ’ কাপে করে দেয়া হয়।

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার কথা আসলে ‘ইয়ারবা মেটে’র কথা যেনো আপনাআপনিই চলে আসে। এটি আর্জেন্টিনার খুব জনপ্রিয় একটি হার্বাল চা যাতে উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন রয়েছে। এই চা খেতে বেশ তিতকুটে স্বাদের হয়।

চায়ের শুকনো পাতা ব্যবহার করে এই চা বানানো হয় এবং পরিবেশন করা হয় অনেকটা লাউ আকৃতির গোল পাত্রে এবং ‘বম্বিলা’ নামক এক ধরনের ধাতুর তৈরি স্ট্র দেওয়া হয়। 

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের খুব জনপ্রিয় একটি চা হচ্ছে ‘ক্ল্যাসিক ইংলিশ ব্রেকফাস্ট টি’, যা  সে দেশের ‘আফটারনুন টি’ থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। চায়ের লিকার, দুধ এবং কখনো কখনো চিনি মিশিয়ে বানানো হয় এই চা।

প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি কাপ এই চা পান করা হয় যুক্তরাজ্যে!

মরক্কো

সবুজ চাপাতার সাথে পুদিনাপাতা যোগ করে বানানো এই চা মরক্কোবাসীদের কাছে খুব প্রিয়। গ্লাসে করে এই চা পরিবেশন করা হয় এবং পরিবেশনের সময় পাত্র থেকে প্রায় ৩০ সে.মি উঁচু থেকে ঢালা হয়। ফলে কিছু ফেনার সৃষ্টি হয়, এই বিষয়টাকে তারা সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে মনে করে।

যেকোনো আগুন্তককে চা পানের নিমন্ত্রণ জানানো মরক্কোবাসীদের শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে এবং অতিথির সামনেই সেই চা বানানো হয়।

জাপান

‘মাচা’, বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত গ্রীন টি। এই চা বানানোর পদ্ধতিটাও খানিকটা ভিন্ন। সবুজ চা পাতার পাউডার বানিয়ে তা ফুটন্ত গরম পানির সাথে মিশিয়ে একটি নাড়ানি দিয়ে দ্রুত নাড়তে থাকতে হয়। আর ব্যাস,তৈরি হয়ে গেলো বেশ কড়া ফ্লেভারের একটা চা।

আরো একটা ব্যাপার রয়েছে; এই চা সাধারণত ‘ওয়াগাশি’ নামের এক মিষ্টান্নের সাথে সাধারণত পরিবেশন করা হয়।

তুর্কি

বিশ্বের মোট উৎপাদিত চায়ের ৬-১০ শতাংশ উৎপাদিত এই দেশে। শুধু তাই নয়, চা পরিবেশন তুর্কিদের সংস্কৃতি এবং আতিথেয়তার একটি অংশ।

বেশ কড়া লিকারের চা যার সাথে কখনোই দুধ মেশানো হয় না; তবে চিনি মেশানো হয়। দুই স্তরের চা পাত্রে সাধারণত এই চা বানানো হয় এবং পরিবেশন করা হয় টিউলিপ ফুল সদৃশ কাঁচের গ্লাসে।

শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি  অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic