চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করছে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু’তে এক অনুষ্ঠানে এ কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
মন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। দেশের সিংহভাগ আমাদানি-রপ্তানি চট্টগ্রাম দিয়ে হয়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
“…হাছান মাহমুদ বারবার আমাকে অনুরোধ করেছেন। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু করার জন্য। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী, বন্দরনগরী সে বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ডিটিসিএ এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”
মেট্রোরেল প্রকল্পকে তরুণ প্রজন্মের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ হিসেবে বর্ণনা করে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রামে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও লোকজনের মধ্যে উদ্দীপনা থাকবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি মেরিনড্রাইভ নির্মাণের জন্য ডিপিপির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “টানেলের বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। টানেলের প্রত্যেকটি গাড়ি স্ক্যান করা হবে। সেজন্য স্ক্যানার বসানোর কাজ চলছে। আনুষঙ্গিক কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রীর সময় নিয়েই উদ্বোধন হবে।”
চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেটোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলবে দুই বছর। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা, যার ৫৭ কোটি টাকা দেবে কোইকা আর বাকি অর্থের সংস্থান করবে বাংলাদেশ সরকার।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল লাইন স্থাপনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে আসছেন।
“দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত হয়েছে। আরকিছু ধীরগতিতে চলছে। এর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন।”
মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প চট্টগ্রাম নগরীকে নান্দনিক করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম সিটিতে ২২ লাখ ভোটর। এসব শহরে যে পরিমাণ ভোটার হয়, তার তিনগুণ জনসংখ্যা হয়।
“…এই শহরে কিছুদিন পর ১ কোটি জনসংখ্যা হবে। এই শহরকে বসবাসযোগ্য করতে পরিবহন ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সাজাতে হবে।”
চট্টগ্রামে মেট্রোরেল লাইন ভূগর্ভে করা যায় কি না তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “পরিবহন সেক্টরে চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে। এখানে ওভারপাস, আন্ডারপাস, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা নেই।”
মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার নান্দনিক পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাটির নিচে ও উপরে- দুই দিকেই এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। তবে উপরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকায় ভূগর্ভকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
অন্যদের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব আমান উল্লাহ নূরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরীফা খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।