Loading...
The Financial Express

ক্রয়াদেশ ‘কমছে’, রেকর্ডের পরও শঙ্কিত পোশাক রপ্তানিকারকরা

| Updated: January 27, 2023 18:21:14


ক্রয়াদেশ ‘কমছে’, রেকর্ডের পরও শঙ্কিত পোশাক রপ্তানিকারকরা

গেল দুই মাসে অভাবনীয়ভাবে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হলেও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারায় ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্প মালিকরা।

রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলছেন, গত চার মাস ধরে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমছে; এটাই তাদের শঙ্কার মূল কারণ।

গতবছর জুনে ক্রয়াদেশ থাকলেও গ্যাস সঙ্কটের কারণে পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। এরপর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে পোশাকের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে যায়।

সেপ্টেম্বরে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। আর অক্টোবরে ৩৫০ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের চেয়ে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম।

তবে রপ্তানিকারকদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে নভেম্বর মাসে ৫০৯ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

এরপর ডিসেম্বর মাসে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, রপ্তানি হয় ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য।

টাকা বা ডলারের হিসাবে ডিসেম্বর মাসে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসের সর্বোচ্চ।

অবশ্য রপ্তানি আয়ের এমন তথ্য দেখে অনেক শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী অবাক হয়েছেন। এখন তারা ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কারণে জানুয়ারিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কার কথা বলছেন।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নভেম্বর, ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান ভালো অবস্থা দেখালেও জানুয়ারিতে সেটা থাকবে বলে তিনি মনে করতে পারছেন না।

“কারণ আমরা যে অর্ডার পাই, সেটা শিপমেন্ট হয় ৩/৪ মাস পর। সে কারণে আমরা চার মাস আগ থেকে বলে আসছিলাম যে অর্ডার স্লো হয়ে গেছে, সেটার প্রভাব জানুয়ারি থেকে পড়তে শুরু করবে।”

বন্দরে এখন পণ্যজট না থাকাকেও ক্রয়াদেশ ও রপ্তানি কমে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখাচ্ছেন এই পোশাক ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, “এখন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলো খালি। বন্দরে কোনো পণ্যজট নেই। এটা কিন্তু একটা খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। আগে বন্দরে জাহাজ এসে ৫/৭ দিন দাঁড়িয়ে থাকত। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই। পণ্য কম থাকার কারণে জাহাজ যেদিন আসে, সেদিনই ছেড়ে যায়। এ কারণে জেটিতে কোনো জাহাজই নেই।”

পণ্যের ক্রয়াদেশ এখন কতটা কমেছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান ফারুক হাসানের কাছে নেই। তবে ধারণা থেকে তিনি বলছেন, ক্রয়াদেশ গড়ে ৩০ শতাংশের মত কমেছে।

“অনেকের ৪০ শতাংশ কমেছে, অনেকের হয়ত ১৫ শতাংশ কমেছে…।”

ক্রয়াদেশ কমার পরও গত ডিসেম্বরে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড কীভাবে হল, তার একটি ব্যাখ্যাও দেন জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, “ইদানিং আমাদের কিছু উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি হচ্ছে। সে কারণে ভ্যালুর বিচারে হয়ত বোঝা যাচ্ছে না। পণ্যের পরিমাণ কিন্তু ইতোমধ্যে কমে গেছে। গত ছয়টা মাস কাঁচামাল, বিশেষ করে তুলার দাম বেড়ে গেছে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পণ্যমূল্যও বেড়েছে। এ কারণেই টাকার অংকে বড় একটা পরিমাণ দেখা গেছে।

“নভেম্বর-ডিসেম্বরে রেকর্ড রপ্তানি হলেও সেখানে কিন্তু পণ্যের পরিমাণে বা সংখ্যায় গ্রোথ হয়নি, গ্রোথ হয়েছে টাকার অংকে। সুতা, তুলার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে।”

রপ্তানিকারকদের আরেকটি সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলছেন, ডিসেম্বরে যে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, তাতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের অবদান রয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইউরোপে যুদ্ধ ও মন্দার কারণে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে অনেক ক্রেতাই তাদের শিপমেন্ট হল্ট করেছিলেন। সে কারণে ওই দুই মাসে ধারণার চেয়ে বেশি পরিমাণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই দুই মাসে থামিয়ে রাখা কিছু শিপমেন্ট নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বুঝে নিয়েছেন ক্রেতারা।”

বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের কাজী ইফতেখার হোসেন অবশ্য মনে করেন, পোশাক খাতের ক্রয়াদেশ কিছুটা কমলেও সেটা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি।

“কারণ গত কয়েক মাসে কারখানাগুলো নিজেদের ইউনিটে কাজ করানোর পাশাপাশি সাব কন্ট্রাক্টের মাধ্যমেও কাজ করাচ্ছিলেন। এখন হয়ত সাব কন্ট্রাক্ট বন্ধ হয়েছে। পাশাপাশি ক্রয়াদেশ কিছুটা কমলেও সেটা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।

ক্রেতাদের সহযোগিতা চায় বিজিএমইএ

দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।

চিঠিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পোশাকের ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে শর্ত হিসাবে নির্দিষ্ট বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে কাপড় ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক সামগ্রী কেনার শর্ত শিথিল করার অনুরোধ করা হয়েছে।

শিল্প, বাণিজ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে প্রায় ১৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। নভেম্বরে এক দফায় খুচরা বিদ্যুতের গড় মূল্য ৫ শতাংশ বাড়ার পর গ্যাসের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর আলোচনা চলছে। আর সরকারের পক্ষে থেকে প্রতি মাসে মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

পোশাক মালিকরা বলছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা মানা হয়নি। শুধু ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ২৫ টাকা করার প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা করলেও দাম বেড়েছে আরও অনেক বেশি।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাতে সামগ্রিক উৎপাদন খরচ ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিজিএমইএর সহ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম।

Share if you like

Filter By Topic