Loading...
The Financial Express

কস্তুরী: মহামূল্যবান এক দুর্লভ সুগন্ধি

| Updated: September 25, 2022 19:04:09


কস্তুরী: মহামূল্যবান এক দুর্লভ সুগন্ধি

কহিলাম তারে, কস্তুরী কিবা কি তুমি,

সুবাসে তোমার পাগল এমন তাইতে?

পারস্যের বিখ্যাত কবি শেখ সাদি একবার পুকুরে স্নান করতে গিয়ে অদ্ভুত রকমের কাদামাটি খুঁজে পেলেন। কাদা থেকে অনেক সুঘ্রাণ আসছিল। তিনি কাদাকে কস্তুরী ভেবে বসেছিলেন। এরপর কাদাটি নিজেই কথা বলে ওঠে এবং তার ভুল ভাঙিয়ে দেয়।

শেখ সাদি ছাড়াও মধ্যযুগের অনেক কবি তাদের কবিতায় কস্তুরী নামের একটি সুগন্ধির প্রশংসা করেছেন। দিল্লি থেকে শুরু করে পারস্য পর্যন্ত রাজা-বাদশারা আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে এই বিশেষ সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।

এই সুগন্ধি সাবান ও অন্যান্য প্রাসাধনীতেও ব্যবহার করা হতো। তখন এই প্রসাধনীগুলো খুবই চড়া দামে বিক্রি হতো। এগুলো ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। রাজমহলের সুলতানারা এই প্রসাধনী ব্যবহার করতেন।

ফারসি ভাষায় কস্তুরীকে বলা হয় মেশক। ইংরেজিতে মাস্ক। এটি হরিণের অঙ্গবিশেষ। এক বিশেষ প্রজাতির হরিণের নাভি থেকে সুগন্ধযুক্ত এই অংশটি পাওয়া যায়। অনেকের কাছে এটি মৃগনাভি নামেও পরিচিত।  

এই হরিণগুলো আবার সুন্দরবনের চিত্রল হরিণের মত না। দেখতে কিছুটা লাল বর্ণের এই হরিণগুলোর বসবাস হিমালয় ও সাইবেরিয়ার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে।

দুঃখজনকভাবে, হরিণের শরীর থেকে কস্তুরী সংগ্রহের জন্য হরিণটিকে হত্যা করতে হয়। এরপর হরিণের নাভি থেকে একটি ছোট বলের মত অংশ কেটে বের করা হয়। এর ভেতরই থাকে মহামূল্যবান সুগন্ধি।

অবশ্য সব লাল বর্ণের হরিণের ভেতর কস্তুরী থাকে না। শুধু পুরুষ হরিণ থেকেই এটি পাওয়া যায়। পুরুষ হরিণেরা নারী হরিণীদের আকৃষ্ট করতে নাভি থেকে এই সুগন্ধি তরল বের করে। তাই বলা হয়ে থাকে, কস্তুরীর ভেতর বিপরীর লিঙ্গকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে।  

কস্তুরী সংগ্রহের পর প্রাথমিকভাবে তা তরল অবস্থায় থাকে। এর সুঘ্রাণ হয় অনেক তীব্র। এর সাথে প্রয়োজন মত অ্যালকোহল মিশ্রিত করে সুঘ্রাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অথবা তরল অবস্থা থেকে শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংগ্রহ করা যায়।

সুগন্ধি ছাড়াও কস্তুরীর আরেকটি বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। এটি ফিক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। ফিক্সেটিভ হলো সুঘ্রাণ ধরে রাখার একটি উপাদান। অন্যান্য সুগন্ধির সাথে কস্তুরীর মিশ্রণ ঘটলে সেই সুগন্ধি দীর্ঘদিন তার সুবাস ধরে রাখতে পারে। এ সকল গুণাগুণের কারণেই এর বাজার মূল্য ছিল অনেক। তখন এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে কস্তুরীর প্রচুর চাহিদা ছিল। 

হরিণই একমাত্র কস্তুরীর উৎস না। হরিণ ছাড়াও স্পার্ম নামের এক ধরণের তিমি রয়েছে যার থেকে কস্তুরীর ন্যায় উপাদান পাওয়ায় যায়। পাশাপাশি আরো কিছু প্রাণীর কথা জানা যায় যাদের হরিণের মত কস্তুরীর অঙ্গ রয়েছে।

তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন আর হরিণ হত্যা করে কস্তুরী সংগ্রহ করা হয় না। এখন কৃত্রিম উপায়ে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধি তৈরি করা যায়। এই কৃত্রিম সুগন্ধির দামও সাধারণের হাতের নাগালে থাকে। 

বর্তমানে প্রায় সব দেশেই হরিণসহ সকল প্রকার বন্যপ্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ। তাই বাজারে যেই সুগন্ধিগুলো পাওয়া যায় তাতে কস্তুরীর ব্যবহার নেই বললেই চলে।

সাজিদ আল মাহমুদ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন।

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic