এখনও প্রকল্প অনুমোদনের পর্যায় পেরোতে না পারলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের আশা এখনও ছাড়েনি নির্বাচন কমিশন বলে জানিয়েছেন কমিশনার মো. আলমগীর।
কত আসনে ইভিএমে ভোট করা যাবে তা নিয়ে আগামী কমিশন সভায় আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানান এই নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনের বাজেট সংকটে আসন্ন উপ নির্বাচনে সিসি টিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নিতে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়ার পর্যায়ে রয়েছে।
গত ১৯ অক্টোবর প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। এক দফা ফেরত আসার পর প্রয়োজনীয় আরও তথ্যসহ আবারও কমিশনে পাঠানো হয়। তবে এখনও তা সরকারের অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় তোলা হয়নি।
এর আগে প্রকল্প অনুমোদনের কোনো অগ্রগতি না দেখে গত নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেছিলেন, “মধ্য জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প পাস না হলে পরবর্তী কাজগুলো করা সম্ভব হবে না।”
গত মঙ্গলবার সবশেষ একনেক সভায় এ প্রকল্প উত্থাপিত না হওয়ার দুই দিন পর এই নির্বাচন কমিশনার ‘মধ্য জানুয়ারির’ সময়সীমার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, “দেড়শ আসনে ভোট করতে দুই লাখ ইভিএম লাগবে। এর কম এক লাখও হতে পারে। প্লানিং কমিশন থেকে চূড়ান্ত কিছু পাইনি। ইয়েস বা নো কিছুই বলেনি। যেহেতু প্লানিং কমিশনে আছে, তারা চূড়ান্ত কিছু বললে আমরা বলতে পারব। এ মাসে প্লানিং কমিশন যদি বলে আমরা এত দিতে পারব, তখন আমরা কত আসন বলতে পারব।”
ইভিএম প্রকল্প অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বলার সঙ্গে সঙ্গে তো করা যায় না। নতুন ইভিএমের ক্ষেত্রে প্রকিউরমেন্ট, সফটওয়্যার ইন্সটলেশন, কোয়ালিটি চেকিং, ডেলিভারি, ট্রেনিং, ভোটার এডুকেশনের বিষয় রয়েছে।
“সব কিছু মিলিয়েই আমরা বলেছিলাম, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে না হলে আমাদের পক্ষে দেড়শ আসনে করা সম্ভব না। কথাটি বলেছি সর্বোচ্চ। আমাদের হাতে যে ইভিএম আছে তা নিয়ে ৭০-৮০টি করতে পারব। এটাও এক্সেক্টলি (সুনির্দিষ্টভাবে) বলা যায় না। কারণ কতটি কার্যকর রয়েছে, ট্রেনিং দিয়ে কতগুলো প্রস্তুত করতে পারবো- এসব বিষয় রয়েছে।”
ইসির হাতে লাখ খানেক ইভিএম থাকার পরও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়।
প্রকল্প ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতামত শুনবে ইসি
নির্বাচন কমিশনার জানান, “ইভিএম প্রজেক্টের কর্মকর্তাদের কথা আগে শোনা হবে। কাজটি প্র্যাকটিক্যালি তারা করে, নির্বাচন অধিশাখার কর্মকর্তা, প্রযুক্তি শাখার কর্মকর্তাদের কথা শুনতে হবে। এরপর আলোচনা করে বলতে পারবো কত দিনের মধ্যে হলে কতটা আসন করতে পারবো।
“কারণ আমাদের হিউজ কাজ, অনেক সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত প্রজেক্ট যেহেতু অমোদন হয়নি, সবশেষ অবস্থা আমরা অফিসিয়ালি পাইনি বা আমার জানা নেই। তবে হয়ত আগামী কমিশন সভায় আলোচনা হতে পারে, যদিও আগামী সভায় এজেন্ডাভুক্ত নেই এটা। বিবিধ বিষয় হিসেবে আলোচনায় আসতে পারে। সেখানে আলোচনার পরেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।”
উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকছে না যে কারণে
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি আসনে উপ নির্বাচন। এসব ভোটে সিসি ক্যামেরা থাকছে না। অর্থ সংকটের কারণে তা করতে পারছে না ইসি।
তবে জাতীয় নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা রাখা হবে কি না সে বিষয়ে তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি বলেন, “কিছু নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে, ভালো সুফল পেয়েছি। এটা একজিসটিং (বাজেটের) টাকার মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে। এর জন্য এক্সট্রা (বাড়তি) বাজেট সরকারের কাছে চাইনি আমরা। আমাদের চলতি অর্থবছরের যে টাকা রয়েছে সে টাকা দিয়ে যে পাঁচটি উপনির্বাচন হবে, সেখানে সিসি টিভি ব্যবহারের জন্য যে টাকা দরকার হবে সে টাকা তো নেই।”
বর্তমান আর্থিক প্রেক্ষাপটে সরকারের কাছে বাজেট চাওয়াও যুক্তিযুক্ত না বলে মন্তব্য করেন তিনি।