রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেইনের যুদ্ধ সক্ষমতা জোরদারে কিইভকে অত্যাধুনিক ট্যাংক পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি প্রস্তুত বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সূত্র।
বার্লিন, ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপকে ‘নির্লজ্জ উসকানি’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে মস্কো।
এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানি ট্যাংক সরবরাহে রাজি হল যখন ইউক্রেইন দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।
পশ্চিমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখতে কিইভের জন্য এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম হয়ে উঠেছিল, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বুধবারই ইউক্রেইনে তাদের আব্রামস ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দিতে পারে; কাছাকাছি সময়ে বার্লিনও ইউক্রেইনে তাদের লেপার্ড ২ ট্যাংক সরবরাহের সিদ্ধান্ত জানাতে যাচ্ছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এখন পর্যন্ত কেউই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও অত্যাধুনিক এসব ট্যাংক পাওয়ার সম্ভাবনা কিইভের কর্মকর্তাদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১১ মাস ধরে চলা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে।
তাদের দরকার, এ ধরনের কয়েকশ অত্যাধুনিক ট্যাংক, অবশ্য আপাতত কয়েক ডজন পেলেও তারা খুশি থাকবে।
“আমাদের ট্যাংক ক্রুদের জন্য কয়েকশ ট্যাংক, যা হতে চলেছে গণতন্ত্রের সত্যিকারের মুষ্টিবদ্ধ হাতের ঘুষি,” টেলিগ্রামে এমনটাই বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রশাসনের প্রধান আন্দ্রিই ইয়েরমাক।
বুধবার ৪৫ বছরে পড়া জেলেনস্কি মঙ্গলবার তার রাতের ভাষণেও মিত্রদের কাছে ফের অত্যাধুনিক যুদ্ধ ট্যাংক চেয়েছেন।
ট্যাংকের ‘বড় প্রয়োজন’, বলেছেন তিনি।
ক্রেমলিনকে তাদের যুদ্ধ আরও বিস্তৃত করার সুযোগ করে দেবে এই আশঙ্কা থেকে জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র এতদিন পর্যন্ত ইউক্রেইনকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া থেকে বিরত ছিল। শেষপর্যন্ত তারা কিইভের অনুরোধে নতি স্বীকারে বাধ্য হল।
জার্মানি আপাতত ১৪টি ট্যাংক পাঠানোর কথা ভাবছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার সহজ হওয়ায় তাদের লেপার্ড ট্যাংক ইউক্রেইনে বেশ কাজে আসবে বলেই মনে করছেন অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক।
বেশি জ্বালানি খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রের আবামস ট্যাংক অতটা কাজে না এলেও, এগুলো ইউক্রেইনে পাঠানোর ব্যাপারে ওয়াশিংটনের সবুজ সংকেত বার্লিনকে স্বস্তি দেবে।
ইউক্রেইনে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হলে তা যুদ্ধের স্থায়িত্ব বাড়াবে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া; কিইভের মিত্ররা পৃথিবীকে একটি ‘বৈশ্বিক বিপর্যয়ের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অনেক রুশ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ ট্যাংক পাঠালে তা হবে ‘আরেকটি নির্লজ্জ উসকানি’, বুধবার এমনটাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ।
“ওয়াশিংটন যে আমাদের কৌশলগত পরাজয় দেখতে চাইছে, তা স্পষ্ট। নেটোর অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র যেভাবে ধ্বংস হয়েছে আমেরিকান ট্যাংকগুলোকেও আমাদের সামরিক বাহিনী সেভাবেই ধ্বংস করবে,” দূতাবাসের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে আন্তোনভের এ প্রতিক্রিয়াই প্রকাশিত হয়েছে।
ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর শুরুর দিকে রাশিয়ার যুক্তি ছিল, তারা ইউক্রেইনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ ও ‘নিরস্ত্রীকরণের’ লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ শানিয়েছে; এখন তাদের সেই যুক্তি অনেকটাই বদলে গেছে। এখন তারা বলছে, ইউক্রেইনে সমন্বিত পশ্চিমের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা।
অন্যদিকে ইউক্রেইন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিনা উসকানিতে আগ্রাসনে নামার অভিযোগ করে যাচ্ছে।