মহামারীর পর ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে ডলারের যে সংকট দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডলার সংকট বাংলাদেশের একার না, বিশ্বব্যাপী সংকট এখন দেখা দিয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে বিশ্বজুড়ে এ সংকট আরো ‘বাড়তে পারে’ বলেও আশংকা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার শংকা হচ্ছে, সারা বিশ্বেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। সারা বিশ্বে চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থা দেখা দিতে পারে। আমি কিন্তু আগে থেকে আমাদের সবাইকে বলে রেখেছি, মাটি আছে। ফসল ফলাও। নিজের খাবার নিজে ব্যবস্থা কর। নিজেরটা আগে নিজে করে রাখি। যেন আমাদের কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয়।
তিনি বলেন. “যুদ্ধের পরে আমেরিকা যে স্যাংশন দিলো তার পরে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে গেল। এবং সেখানে সংকটটা আরো বেশি দেখা দিয়েছে।”
পাশাপাশি ডলার নিয়ে ‘কিছু খেলা কিছু শ্রেণি খেলতে শুরু করেছিল’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভালোভাবে মনিটরিং করা হয়েছে দেখেই একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আমরা আনতে পেরেছি। কিন্তু সংকটটা আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে এসেছে। এখানে আমাদের নিজস্ব কতটুকু দায়িত্ব আছে?”
“তাওতো বাংলাদেশে আমরা চালাচ্ছি। ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের অবস্থা একবার বিবেচনা করে দেখেন… সেখানে কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সে তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট… আমরা প্রণোদনা দিয়েছি।”
দেশের মানুষের কল্যাণে যা যা করণীয়, সরকার তা করে যাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, “একই দিনে এক কোটি ২০ লাখ ভ্যাকসিন কেউ দিতে পেরেছে?”
বিদেশে অর্থপাচার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আমার কাছে আছে। তবে হ্যাঁ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ব্যাংকের ওখান থেকে খবর নেওয়া হচ্ছে। আসবে, সামনে একদিন আসবে।”
সম্প্রতি অর্থপাচার নিয়ে সিআইডির একটি অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিক ফারজানা রূপা প্রশ্ন করেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে নজরদারিতে আনা হবে কি না। এছাড়া অর্থপাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান রূপা। সাম্প্রতিক ডলার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উত্তরে বলেন, “অবশ্যই। এটা নজরদারিতে আনা হয়েছে বলেই আপনারা জানতে পারলেন। আপনারা খুঁজে বের করেননিতো। সাংবাদিকরা বের করেনি।
“আবার এমন এমন অনেকের অর্থ পাচারের তথ্য আছে, ওটা আপনারা লিখবেন কি না আমার সন্দেহ আছে। আমি সোজা কথা বলি। অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আমার কাছে (তথ্য) আছে।”
সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা করা বাংলাদেশিদের তথ্যের বিষয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সুইস ব্যাংকে বহু আগেই আমাদের ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম। তালিকা চেয়েছিলাম। কোনো তালিকা আসে নাই। কেউ বলতে পারে নাই। সবাই বলে যায়, হাওয়ায় বলে যায়, কিন্তু সঠিক তথ্য দিয়ে বলতে পারে না। এটা একটা সমস্যা।”
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি প্রতিবছর এই তথ্য প্রকাশ করে, তবে সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা করা বাংলাদেশিদের বিষয়ে কোনো তথ্য সরকার তাদের কাছে চায়নি।
“এসব বিষয়ে (তথ্য পাওয়ার বিষয়ে) কীভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, সে বিষয়ে সরকারকে সব ধরনের তথ্য আমরা দিয়েছি। কিন্তু আলাদাভাবে অর্থ জমা করার বিষয়ে কোনো অনুরোধ আসেনি।”
পরদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রাষ্ট্রদূদের ওই বক্তব্য ‘অসত্য’।
বিষয়টি হাই কোর্টেও গড়ায়। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে বলা হয়, সুইস রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বক্তব্যের সাথে ‘সাংঘর্ষিক’।