Loading...
The Financial Express

স্বর্ণ বিক্রি করতে গিয়ে রসিদ আর পরিচয়পত্র দেখানোর নিয়ম, কী সুবিধা-অসুবিধা হবে?

| Updated: September 21, 2022 17:16:52


স্বর্ণ বিক্রি করতে গিয়ে রসিদ আর পরিচয়পত্র দেখানোর নিয়ম, কী সুবিধা-অসুবিধা হবে?
বাংলাদেশে পুরাতন স্বর্ণ কেনার আগে বিক্রেতার পরিচয়পত্র সংরক্ষণ এবং ক্রয় রসিদ দেখাসহ কিছু নিয়মনীতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

পুরাতন বা ব্যাগেজ রুলের স্বর্ণ কেনার আগে বিক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্ট-ভিসার কপি সংরক্ষণ করা, ক্রয় রসিদ দেখা, পাশের কোন দোকানের মালিক বা কর্মীকে সাক্ষী হিসাবে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

বাংলাদেশে এই সমিতির চার হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে।

কিন্তু কেন এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সমিতি? আর গ্রাহকদের ওপর তা কী প্রভাব ফেলতে পারে?

কী কী নিয়ম করেছে বাজুস?

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সাধারণত বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায় সোনা আসে পুরাতন স্বর্ণ কেনা এবং বিদেশে থেকে ব্যাগেজ রুলের আসা স্বর্ণ থেকে।

বাজুস বলছে, পুরাতন স্বর্ণ কেনার ক্ষেত্রে সমিতির সদস্যদের বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, স্বর্ণালঙ্কারের উৎস জানা, ক্রয় রসিদের কপি সংরক্ষণ, পাশের দোকানের মালিক বা কর্মীদের সাক্ষী হিসাবে রাখতে হবে।

বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসার সময় নাগরিকদের অনেকে স্বর্ণ নিয়ে আসেন। এগুলো পারিবারিক ব্যবহারের কথা থাকলেও অনেকে বিক্রি করে থাকেন।

বাংলাদেশের প্যাসেঞ্জার ব্যাগেজ রুলস ২০১৬ অনুযায়ী, কর না দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সর্বোচ্চ ১০০ গ্রামের স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারবেন। এছাড়া একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম ওজনের সমপরিমাণ স্বর্ণের বার আনতে পারেন। এজন্য তাদের কাস্টমসে ঘোষণা দিতে হবে এবং স্বর্ণের বারের ক্ষেত্রে শুল্ক দিতে হবে।

এ ধরনের স্বর্ণ কেনার ক্ষেত্রে বিক্রেতার পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, এয়ারপোর্ট ডিক্লারেশন বা কর প্রদানের সার্টিফিকেট ইত্যাদি যাচাই করে নিতে হবে।

চিন্তায় সাধারণ গ্রাহকরা

ঢাকার ধানমণ্ডির সোমা সাহার বিয়ের সময় মা এবং উপহার হিসাবে প্রায় আট ভরি স্বর্ণ পেয়েছেন। কিন্তু এর কোনটারই কোন রসিদ নেই। এমনকি বিয়ের পরবর্তীতে স্বামী যেসব সোনার গহনা উপহার দিয়েছেন, তার উপস্থিতিতে দোকান থেকে কেনা হলেও সেগুলোও রসিদ সংরক্ষণ করা হয়নি। গ্রামের বাড়ির দোকান থেকে বানানো গহনার কোন রসিদও নেয়া হয়নি।

''বাংলাদেশে কখনো সোনা কিনতে গিয়ে অথবা ভাঙ্গাতে গিয়ে তো কখনো রসিদ দেখাতে হয়নি। স্যাকরাকে টাকা দিয়েছি, নতুন করে বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন যদি বিক্রি করতে গিয়ে রসিদ দেখাতে হয়, সেটা কই পাবো জানি না,'' বলছিলেন সোমা সাহা।

বাংলাদেশের আরও অনেকের মতো স্বর্ণকে সোমা সাহা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের উপকরণ হিসাবে নয়, ভবিষ্যতের একটি সঞ্চয় হিসাবে গণ্য করেন। এ কারণে পারিবারিক ভাবেও অন্য কিছু কেনার তুলনায় স্বর্ণ কেনা বা গহনা তৈরির ওপর তারা বরাবর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

তার মতোআরেকজন শিখা রহমানের বেশ অনেক ভরি স্বর্ণ রয়েছে। বিয়ে-শাদি বা অনুষ্ঠান ছাড়া এমনিতে এগুলো তার খুব বেশি পরা হয় না। কিন্তু বহু বছর ধরে তিনি টাকা জমিয়ে জমিয়ে সোনার নানা গহনা তৈরি করেছেন।

''দেখেন, সোনার দাম কখনো কমে না। আমি চার হাজার টাকা দিয়ে ভরি কিনে গহনা বানানো শুরু করেছি, এখন সোনার ভরি লাখ টাকার কাছাকাছি। সঞ্চয়পত্র বা অন্য কিছু কিনে রাখার চেয়ে জমি বা সোনা কিনে রাখলে লাভ,'' তিনি বলছিলেন।

কিন্তু এখন বিপদে পড়লে সেসব গহনা কিভাবে বিক্রি করবেন, তা নিয়ে খানিকটা চিন্তায় পড়েছেন।

''একটা দুইটা রিসিট হয়তো পেতে পারি, কিন্তু বেশিরভাগ জুয়েলারির তো রিসিট রাখি নি। এখন যদি সেগুলো ছাড়া বিক্রি করতে যাই, রিসিট না থাকলে তো কম দাম দিতে চাইবে। একটু চিন্তাই হচ্ছে,'' তিনি বলছেন।

কারণ তার আশঙ্কা, কেনার চেয়ে বিক্রি করতে গেলে এমনিতেই স্বর্ণের গহনার দাম কম পাওয়া যায়। এখন কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে হয়তো আরও বেশি কম দিতে চাইবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে তিনি আরেকটি কথা ভেবে খুশি,''তারা যদি সত্যিই এসব নিয়ম মেনে চলে, হয়তো সোনার চুরি-চামারি কমতে পারে। কিন্তু দেখা যাবে, তারা বেআইনিভাবেও সোনা কিনছে, আবার আমাদেরও কম দাম দিতে চাইছে।''

কেন এই সিদ্ধান্ত?

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের অ্যান্টি-স্মাগলিং অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''ইদানীং চুরি-ডাকাতি অনেক বেড়ে গেছে। এসব চুরির বা ডাকাতির স্বর্ণ যাতে ক্রয় বিক্রয় করা না যায়, সেজন্য আমরা এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। সেই সঙ্গে আমাদের কাছে আসা স্বর্ণের উৎসের ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে।''

''স্বর্ণের ব্যবসা বা সোনার ক্রয়-বিক্রয় অনুৎসাহিত করার জন্য নয়, বরং এই ব্যবসাকে বৈধ করার জন্য, নিয়মনীতির মধ্যে আনার জন্যই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি,'' তিনি বলছেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশে স্বর্ণ ব্যবসায় সোনা আসে মূলত পুরাতন সোনা এবং বিদেশ থেকে আনা সোনা থেকে। সরকারের কাছে পুরাতন স্বর্ণ কেনার ঘোষণাও দিতে হয়। কিন্তু এরকম স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে অনেক সময় অভিযোগ ওঠে। অনেক সময় অবৈধ স্বর্ণ কিনে ব্যবসায়ীরা আইনি ঝামেলায় পড়ে যান।

ফলে এরকম নিয়ম অনুসরণ করা হলে স্বর্ণের উৎস পরিষ্কার হবে, অবৈধ বিক্রেতারা সোনা চুরি বা বিক্রি করার সাহস করবেন না বলে তিনি আশা করছেন।

কিন্তু এতে সাধারণ গ্রাহকরা কি কিছুটা বিপদে পড়বেন কিনা, জানতে চাওয়া হলে এনামুল হক খান বলেন, ''আমরা রসিদের কথা বলেছি। কিন্তু আমরাও জানি যে, বাংলাদেশে অনেক গ্রাহক হয়তো রসিদ রাখেননি। সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই কাগজপত্র দিতে হবে। যেমন রসিদ হারানোর জিডি, পরিচয়পত্র, বাসার ঠিকানা, টেলিফোন নাম্বার-ইত্যাদি থেকে আমরা প্রকৃত মালিককে যাচাই করতে পারবো।''

''মূল কথা হলো আমরা আসল মালিকদের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনতে চাই, প্রয়োজনে যেন তাকে শনাক্ত করা যায়। এতে আসলে আসল মালিকরাই উপকৃত হবেন। এসব নিয়মের ফলে কেউ চুরি করে স্বর্ণ বিক্রি করতে আসবে না। আর আমাদের কোন সদস্য যদি এটা করেন, তাদের কোন দায়দায়িত্ব আমরা নেবো না,''তিনি বলছেন।

Share if you like

Filter By Topic