Loading...
The Financial Express

সালমান শাহ: এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর

| Updated: September 20, 2022 18:56:07


সালমান শাহ (১৯৭১-১৯৯৬) সালমান শাহ (১৯৭১-১৯৯৬)

বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৫১, কিন্তু চিরসবুজ নায়ক সালমান শাহর বয়স তো থেমে আছে সেই ২৫ - এই। ১৯৭১ - এর ১৯ সেপ্টেম্বর তার এ পৃথিবীতে আসা, আবার ১৯৯৬ এর ৬ সেপ্টেম্বর চলে যাওয়া।

মৃত্যুর ২৬ বছর পরও আজও জনপ্রিয় সালমান শাহ। এখনও তার কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ ঝরে অনেকের কণ্ঠে। কিন্তু কেন এত জনপ্রিয় হয়েছিলেন সালমান, নায়কের পাশাপাশি সুঅভিনেতাও কি হয়ে উঠেছিলেন? সেসব বিষয়েই একটু আলোচনা করা যাক।

সালমান শাহের ছোট পর্দায় প্রথম উপস্থিতি ছিল হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় - ইত্যাদি অনুষ্ঠানে। তিনি অবশ্য তখনও সালমান শাহ হননি, তিনি তখন চৌধুরী মোহাম্মদ সালমান শাহরিয়ার। সিলেটের বনেদী পরিবারের ছেলে।

১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমা দিয়ে তার অভিষেক হয় চলচ্চিত্রে। এই সিনেমার শেষে পেটে ছুরি ঢোকানোর দৃশ্য কিংবা 'এখনতো সময় ভালোবাসার' গানে তার রোমান্টিক এক্সপ্রেশনের কথা কে ভুলতে পেরেছে?

সালমান এই ছবির শেষদৃশ্যের অভিনয়ে আমির খানকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান।  

সালমান শাহ তার প্রায় চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর ভেতর যদি আলাদাভাবে তার অভিনয় নিয়েই বলতে হয়, তবে অবধারিতভাবে আসবে বিক্ষোভ সিনেমাটির কথা।

সালমান তখন আগাগোড়া রোমান্টিকতায় মোড়ানো এক হার্টথ্রব নায়ক। সে সময়ে নাইম ছাড়া অন্যান্য নায়করা ছিলেন একটু বয়স্ক, যার কারণে একেবারে তরুণ প্রেমিক কিংবা কলেজ বা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ চরিত্রের অভিনয়ে সালমান শাহর জনপ্রিয়তা হয়ে ওঠে তুঙ্গস্পর্শী।

তবে সেই রোমান্টিক ইমেজ থেকে তিনি বেরিয়ে এলেন বিক্ষোভ সিনেমায়। 'একাত্তরের মা জননী' গানে দৃপ্ত এক সালমানকে দেখা গেল। এই ছবির ক্লাইম্যাক্সে জহিরউদ্দীন পিয়ারের সাথে বৃষ্টিতে মারামারির দৃশ্য কিংবা পিয়ারের মৃত্যু মুহূর্তে হাত দিয়ে তাকে শুধু হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া - এই অংশগুলো আলাদাভাবে মনে রাখার মতো।  

তিনি অন্তরে অন্তরে, জীবনসংসার, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই - সিনেমাগুলোতেও চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছিলেন। জীবনসংসার সিনেমার 'পৃথিবীতে সুখ বলে' গানে সেই দৃশ্যটার কথা মনে করা যাক। শাবনূরের পায়ে ফুটে থাকা কাঁটা বের করছেন তিনি।

মুখের অভিব্যক্তিতে আত্মবিশ্বাস, চোখে ভরসা ও আশ্বাস। আবার বাসরঘরে পরিশীলিত রোমান্টিক সালমান। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি তোমাকে চাই সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছিল। তার প্রায় সব সিনেমাতেই চমৎকার সব গান থাকত, যা নিঃসন্দেহে তার সিনেমাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।

সালমান আরেকটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি প্রবল জনপ্রিয়তার সময়ে টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। শমী কায়সারের বিপরীতে নয়ন নাটকে শমীর বিপরীতে সাবলীল ছিল তার অভিনয়।

নৌকাভ্রমণের দৃশ্যে মাঝির চরিত্রে থাকা ফজলুর রহমান বাবুর সাথের অংশেও মেপে অভিনয় করেছেন। বাবুর সাথে দৃশ্যে তাকে দুর্বল মনে হয়নি একবারো৷ সাথে নিজ কণ্ঠে গেয়েছিলেন গান। গান বেশ ভালোই করতেন তিনি। নিজের দুই-একটি ছবিতে প্লেব্যাকও করেছিলেন।

 

সে সময়ের চিত্রতারকারা সাধারণত নাটকে অভিনয় করতেন না। এমন একটি ধারণা কাজ করত যে, দর্শক তাদের ফ্রি-তে টিভির পর্দায় দেখতে পেলে আর টিকেট কেটে হলে যাবে না। সালমান এই ধারণা ভাঙেন। সে সময় টিভি নাটক করার ফলে মধ্যবিত্ত দর্শকের কাছে তার জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে।  

তার ক্যারিয়ারে ফ্লপ সিনেমা ছিল মোটে ৩/৪ টি। তবে এর ভেতর এই ঘর এই সংসার তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা। এই সিনেমায় বুলবুল আহমেদ, রোজী আফসারী, আলিরাজ এর মত অভিনেতাদের সাথে অভিনয়ে  পাল্লা দিয়ে দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। বড় আপা রোজী যখন মৃত্যুমুখে উপনীত, তখন সালমানের সেই অনুতপ্ত অসহায় মুখকে কি ভোলা যায়?

তবে চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে তার শ্রেষ্ঠ অভিনয় ছিল আনন্দ অশ্রু সিনেমায়। তার মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় দেওয়ান খসরু নামের একজন তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সম্পত্তির ষড়যন্ত্রের শিকার খসরুকে পাগল বানানো হয়। এরপরে এই চরিত্রে সালমানের অভিনয় অবিস্মরণীয়। উদভ্রান্ত দৃষ্টি, করুণ হাসি, গরাদ ভাঙার প্রাণপন চেষ্টা - সবকিছু মিলে চরিত্রে মিশে যাওয়া সালমান শাহ।

সিনেমাটিতে 'তুমি মোর জীবনের ভাবনা' গানের আগে সেই স্টাইলিশ ভঙ্গিতে কিছুটা আবৃত্তির ঢঙে গানের মুখড়াটি বলা। প্রথাগত আবৃত্তি নয়, আবার পাঠও নয়; সালমানের দুর্দান্ত ভোকাল ক্যালিসথেনিক্স এর প্রকাশ।

সালমান শাহ ফ্যাশন স্টাইলে যে আইকন ছিলেন সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাকব্রাশ, পনি-টেইল, বাহারি সানগ্লাস - সবমিলিয়ে কমপ্লিট ফ্যাশন আইকন। তবে অভিনয়ের গুণও যে তার ছিল সহজাত ও পরিমিত - তার ছাপও রয়ে গেছে বেশকিছু সিনেমায়।

মৃত্যুর ২৬ বছর পরের এই জন্মদিনেও তাই সালমানকে মনে পড়ে অবধারিতভাবেই। ব্যবসায়িক সাফল্য, অভিনয়, এক্সপ্রেশন ও ফ্যাশন সেন্সের এমন সমন্বয় মূলধারার আর কোন নায়কই বা দেখাতে পেরেছিলেন?

 

মাহমুদ নেওয়াজ জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন

[email protected]

Share if you like

Filter By Topic