রংপুরে ছড়াচ্ছে লাম্পি স্কিন রোগ, মরছে গরু


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: September 18, 2022 20:15:16 | Updated: September 19, 2022 16:33:06


রংপুরে ছড়াচ্ছে লাম্পি স্কিন রোগ, মরছে গরু

রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গত কয়েক দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকটি গরু মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছে কৃষক।

জেলার সিটি করপোরেশন এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড, সদর উপজেলা, গংগাচড়া উপজেলা বেশ কিছু ইউনিয়নে গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তবে আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর কোনো তথ্য জানাতে পারেননি রংপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাখওয়াত হেসেন। তিনি বলেন, গত তিন-চার মাসে উপজেলায় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেক বেশি গরু। চিকিৎসায় অনেক গরু সুস্থ হয়েছে। এখনও এই রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হচ্ছে।

“আমরা আক্রান্তের খবর পেলে ওইসব এলাকায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করি। প্রতিটি ইউনিয়নে সেমিনার করছি।”

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয়। এই রোগে গরুর চামড়ার উপরিভাগে শরীরজুড়ে গোটা সৃষ্টি হয়। সাধারণত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে মশা-মাছির কামড়ে এই প্রাণঘাতী রোগ গরু থেকে আরেক গরুতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

দুধ ও লালার মাধ্যমেও এটি আক্রান্ত গরু বা মহিষ থেকে বাছুরে ছড়াতে পারে। এর চিকিৎসায় এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও টিকা আমাদের দেশে আসেনি। তবে মানুষ এতে আক্রান্ত হয় না।

গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাদি বলেন, “আমার ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় এই রোগ দেখা দিয়েছে। আমার কাছে প্রতিদিন খবর আসছে।”

তিনি বলেন, “তার মধ্যে চর এলাকায় বেশি। বেশি দেখা দিয়েছে ইশোর কুল, জয়রাম ওজা, বাঘের হাট গ্রামে। এ যাবৎ কোনো পশু চিকিৎসক সেখানে যায় নাই।”

একই উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চৌদ্দমাথা এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই রোগে আমাদের এলাকায় ১০-১৫ দিনে চারটা গরু মারা গেছে। আমার একটি গরুর অবস্থা খারাপ। চিকিৎসা করে কোনো লাভ হচ্ছে না। এই গরুটার মূল্য প্রায় আড়াই-তিন লাখ টাকা।”

রোববার সকালে মহানগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চিলমন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সাদেকুল ইসলামের বাড়িতে একটি গরুর লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে।

গরুর শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, “দুইদিনের মাথায় এত বড় গর্ত হয়েছে। গায়ের মাংস পচে পড়ে যাচ্ছে। সেখানে গর্ত হয়ে যাচ্ছে।”

তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রসুলপুর গ্রামের নজর আলী ও বাদশার বাড়িতে গিয়ে লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গরু পাওয়া যায়।

নগরীর চিলমন এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রায় এক মাস ধরে দুটি গরুর গায়ে এই রোগ দেখা দিছে। অনেক টাকা খরচ করি চিকিৎসা করিয়াও ভালো হইতেছে না। এখন আর চিকিৎসা করতেছি না। ইয়ার মধ্যে গরুর পায়ের খুরাত ঘা হইছে। হলুদ-টলুদ দিয়া রাখতেছি।”

প্রায় ২০ দিন আগে ৭ নং ওয়ার্ডের জরড়ার হাট এলাকার আতিকুর রহমান মুরাদ মাস্টারের একটি গরুর গায়ে গোটা বের হতে শুরু করে। পরে তিনি স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তার গরুর শরীরে গোটার পরিমাণ কমেনি। বরং তার গরুটি দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।

আক্রান্ত গরুকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে রংপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাখওয়াত বলেন, “যারা আমাদের কাছে না এসে গ্রামের চিকিৎসক কিংবা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকের গরু মারা গিয়ে থাকতে পারে। তবে আমাদের কাছে সেই তথ্য নেই। আমরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি।”

“মূলত অনেকে এই রোগে আক্রান্ত গরুকে ব্যথার ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে আক্রান্ত পশু আরও দুর্বল হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারে”, যোগ করেন তিনি।

রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রাণী চিকিৎসক বলেন, “এই রোগ প্রতিরোধে আমরা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর আক্রান্ত পশুর জন্য আমরা লক্ষণভিত্তিক সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দিচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করারও চেষ্টা করছি। তবে দুই-এক মাসের মধ্যে শীত এলে এমনিতেই এর প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সিরাজুল বলেন, “দুই বছর ধরে দেশে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। এ বছর জেলায় বেশ কিছু স্থানে এই রোগে গবাদিপশু আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর চিকিৎসায় এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও টিকা আমাদের দেশে আসেনি। এই রোগ প্রতিরোধে আমরা গোট পক্স ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি। এতে আক্রান্ত পশুর সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮০ ভাগ।”

রোগের লক্ষণ দেখা দিলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অথবা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শক্রমে গবাদিপশুর চিকিৎসার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

Share if you like