গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন অংশ তাদের কমিটির প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে দলের প্রতিষ্ঠাতা কামাল হোসেনকে অব্যাহতি দিয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সেই সঙ্গে এ কমিটির সভাপতি পরিষদের সদস্য মো. মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের এ অংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু নিজেই এ ঘোষণা দেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে তাকে গণফোরামের সভাপতি ও মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন ঘোষণা করে। গতবছর ডিসেম্বরে গণফোরাম ভাঙার পর মন্টুর গণফোরামে মিজানুর রহমানকে কমিটিতে রাখা হয়েছিল।
কামালের নতুন কমিটির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে মোস্তফা মহসিন মন্টু মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গত ১৭ সেপ্টেম্বর যে ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অগণতান্ত্রিক।”
তার ভাষায়, ইচ্ছা করলেই কেউ কমিটি উপহার দিতে পারে না। এই এখতিয়ার থাকে কাউন্সিলরদের কাছে।
“কিন্তু কাউন্সিলরদের ইগনোর করে আমরা পর পর দুইটা, একটা রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কাউন্সিল হয়েছিল এক বছরের জন্য, পরবর্তী পর্যায়ে মোকাব্বির খানকে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আওম শফিকউল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে একটা কমিটি ঘোষণা করা হল।
“আবার গত ১৭ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করে ড. কামাল হোসেন নিজে সভাপতি হয়েছেন এবং মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এসব স্ববিরোধী ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্য্কলাপ। আমি বলছি এক কথা, করছি আরকেটা।”
মন্টু বলেন, “দলের সিনিয়র নেতারা যখন এসব কাজ করেন, সাধারণ কর্মীরা হতাশ হয়, জনগণ হতাশ হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি ড. কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে উনার যে বিচরণগুলো হচ্ছে, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে কামাল হোসেন এবং সিপিবি থেকে বেরিয়ে আসা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালে ২৯ অগাস্ট গণফোরাম গঠিত হয়।
কামাল হোসেন তখন থেকেই এ দলের সভাপতি। মানিক মারা গেলে আওয়ামী যুবলীগ থেকে আসা মন্টুকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০২০ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলের পর কামাল তার দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে ওই পদে আনলে ভাঙনের সূচনা হয়।
এরপর দুই অংশের মধ্যে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘোষণা আসে। জাতীয় প্রেসক্লাবে আলাদাভাবে বর্ধিত সভাও করে তারা। এরমধ্যে রেজা দল ছাড়লেও বিরোধ থামেনি।
এক বছর পর মন্টুরা কাউন্সিল ডেকে আলাদা কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিতে সভাপতি মন্টুর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আছেন সুব্রত চৌধুরী।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে আগের দিন গণফোরামের মন্টু নেতৃত্বাধীন অংশের কেন্দ্রীয় কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত পড়ে শোনান প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে দেখলাম যে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের সাথে দীর্ঘদিন সম্পর্কহীন, দল থেকে পদত্যাগকারী, বিভেদ সৃষ্টিকারী ও নিষ্ক্রিয় কিছু ব্যক্তিদের নিয়ে গণফোরাম নাম দিয়ে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ড. কামাল হোসেন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ষষ্ঠ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ও মো. মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তারা কেউই গণফোরামের নির্বাচিত কমিটি থেকে পদত্যাগ না করে স্বঘোষিত একটি গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করেছেন। এমনকি তারা তথাকথিত নির্বাচন কমিশনের সাথেও প্রতারণা করেছেন।”
গণফোরাম কি জাতীয় পার্টির মত বিভক্ত কিনা- এই প্রশ্নে মন্টু বলেন, “গণফোরাম এক ও অভিন্ন। এই দলের জন্ম হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ২৯ অগাস্ট। সাইফুদ্দিন মানিক, আমীরুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, শাহজাহান সিরাজসহ অনেক জাতীয় নেতার সমন্বয়ে এই দল গঠিত হয়েছিল।
“দলের একটা নীতি থাকে। দল আমরা ১০টা ভাগ করতে পারি। কিন্তু কর্মীভিত্তিক যে সংগঠন, মাঠ-পর্যায়ের নেতা-কর্মী সম্পৃক্ত যে দলের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে, সেটাই আসল কমিটি হবে। এখন সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের কমিটি নয়। মাঠ পর্যায়ের মানুষের কাছে যে গণফোরাম অঙ্গীকারাবদ্ধ, আমরা গণফোরামের নীতি আদর্শ বাদ দিয়ে কোনো আপস করতে রাজি নই।”
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, আইয়ুব খান ফারুক, আব্দুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল বারী হামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন ইয়াজদানী, কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, নাসির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।