বিশ্বের জ্বালানি বাজারে সঙ্কটের মধ্যে ভারতের উদ্বৃত্ত থেকে জ্বালানি তেল আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সচিব বলেন, “জ্বালানি ইস্যুতে তারা একটু সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, আমরা সবাই জানি। সুতরাং তাদের যদি উদ্বৃত্ত থাকে, সেটা যদি আমাদের সাথে কোনো লং টার্ম এগ্রিমেন্ট আমরা করতে পারি, সেটা নিশ্চয় আমাদের চেষ্টা থাকবে।”
“তবে নির্ভর করবে যে, তাদের কতখানি উদ্বৃত্ত আছে, তাদের নিজস্ব সাপ্লাই এবং ডিমান্ড সিচুয়েশন আছে, সেটায় তারা কতখানি কমফোর্টেবল,” একই সঙ্গে বলেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অস্থির বিশ্বের জ্বালানি বাজার। রাশিয়া পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে বিশ্বের অনেক দেশের তেল পাওয়ার পথটি কঠিন হয়ে ওঠে।
নিষেধাজ্ঞার মুখে অন্য ক্রেতারা রুশ তেল কেনা থেকে পিছু হটলেও বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা দেশ ভারত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে রাশিয়া থেকে তেল কেনা শুরু করে। চীনও আবার রাশিয়া থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে বলে খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
জ্বালানি তেল নিয়ে বাংলাদেশকেও সঙ্কটে পড়তে হয়েছে। তেলের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমাতে হয়েছে।
রাশিয়া তাদের তেল কিনতে বাংলাদেশকেও প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারেনি ঢাকা।
এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সহযোগিতা পাওয়ার আশা প্রকাশ করছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ।
তিনি বলেন, “আমরা যেহেতু একটু টাইট সিচুয়েশনে আছি, বিভিন্ন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমরা এই রকম সহযোগিতা পেয়েছি … আমরা আশা করছি যে, এ ব্যাপারেও তাদের সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।”
নেপাল থেকে ভারত হয়ে জলবিদ্যুৎ আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নেপালের সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হওয়ার কোনো বিষয়টি এবার নাই। তবে সেটা আগে থেকে আলোচনায় আছে।
জ্বালানির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের বিকল্প থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সুতরাং সবগুলো অপশনই আমরা চালু রাখতে চাই, সেটা ভারতের সাথে হোক, বা পানি বিদ্যুৎ, ভারতের পূর্বাঞ্চলের যে সমস্ত রাজ্যগুলো আছে, সেখানে যদি উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলে আমরা আনার ব্যবস্থা করতে পারি।
“তার জন্য যে সমস্ত গ্রিড প্রয়োজন হবে বা কানেক্টিভিটির প্রয়োজন হবে, সেই বিষয়গুলো তো করতে হবে। সুতরাং হঠাৎ করে এগুলা করা সম্ভব না। তার আগে যদি একটা পলিটিক্যাল আন্ডারস্টান্ডিং থাকে, তাহলে প্রিপারেশনে কিছুটা সময় লাগবে।”
এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফর তেমন ‘রাজনৈতিক বোঝাপড়া’ বাড়াতে ভূমিকা রাখে বলেও মন্তব্য করেন মাসুদ বিন মোমেন।