দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের দেখা সবচেয়ে বড় সংঘাতের ইতি টানতে বড়দিনের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার শুরু করতে ইউক্রেইন রাশিয়ার প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।
‘বড়দিনে যুদ্ধবিরতি’ হবে না, ইউক্রেইনে প্রায় ১০ মাস ধরে যুদ্ধ চালানো রাশিয়া এমনটাই বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেইনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে এখন দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চললেও কারও দিক থেকেই তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই; যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে এখন কোনো ধরনের আলোচনাও চলছে না। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এদিকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বুধবার ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভে প্রথম ড্রোন হামলা হয়েছে। এতে দুটি প্রশাসনিক ভবন আক্রান্ত হলেও হামলায় ব্যবহৃত অধিকাংশ ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করছে ইউক্রেইন।
১৩টি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে, বলেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তুষার আচ্ছাদিত কিইভের একটি জেলার বাসিন্দারা বলেছেন, তারা ড্রোনের ইঞ্জিনের শব্দের কিছুক্ষণ পরই কাছের একটি ভবনে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান।
ইউক্রেইনের কট্টর-ডানপন্থি জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে রুশভাষীদের রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে রাশিয়া চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দেশটিতে সেনা পাঠানোর পর এরই মধ্যে লাখো মানুষের প্রাণ গেছে, লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে, অসংখ্য শহর ধ্বংস হয়েছে।
কিইভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার এ ‘বিশেষ সামরিক অভিযানকে’ বিনা উস্কানিতে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হিসেবে অভিহিত করছে।
“যুদ্ধক্ষেত্র শান্ত নয়, কেবল ধ্বংসযজ্ঞ আর গর্ত আছে,” পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোতে রাশিয়ার কামানের ধ্বংসলীলার কথা উল্লেখ করে সন্ধ্যার নিয়মিত ভাষণে বলেন জেলেনস্কি।
কয়েকদিন আগে জেলেনস্কি সংঘাতের সমাপ্তি টানার পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়াকে ‘বড়দিনের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহার’ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মস্কো তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, যে কোনো অগ্রগতির আগে ইউক্রেইনকে রাশিয়ার কাছে তাদের ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে হবে।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যাহত করতে এবং তুমুল ঠাণ্ডার মধ্যে ইউক্রেইনীয়দের উষ্ণতাহীন রাখতে অক্টোবর থেকে রাশিয়া ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে।
“ইউক্রেইনের আকাশে ও মাটিতে যা হতে দেখছি আমরা, তাতে বছরের শেষ নাগাদ এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে এমন উপসংহারে পৌঁছানো কঠিন,” দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার বলেছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি।
এদিকে প্যারিসে ৭০টির মতো দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার আক্রমণের মুখে ইউক্রেইনের পানি, খাদ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে চলতি সপ্তাহে কিইভকে ১১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেলে ইউক্রেইনের আকাশ প্রতিরক্ষা বেশ শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রেমলিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি প্যাট্রিয়ট দেয়, তাহলে সেগুলো রাশিয়ার বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। ওয়াশিংটন সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেইনের সংঘাতে ‘ক্রমশ আরও জড়িয়ে পড়ছে’ বলে সতর্ক করেছে তারা।
শান্তি আলোচনা না হলেও রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহগুলোতে বেশ কয়েকবারই বন্দি বিনিময় হয়েছে। এর পাশাপাশি সার উৎপাদনে জরুরি একটি উপাদান রাশিয়াকে রপ্তানির সুযোগ দেওয়া এবং শস্য চুক্তির বিস্তৃতি নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতিরও খবর পাওয়া গেছে।
এসবের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, কিইভ ও মস্কোর মধ্যে একাধিক পর্যায়ে সামান্য হলেও যোগাযোগ আছে।
সর্বশেষ বন্দি বিনিময়ে যে ডজনখানেক লোককে ইউক্রেইন ফেরত পেয়েছে, তার মধ্যে এক মার্কিন নাগরিকও আছে বলে বুধবার জানিয়েছে কিইভ ও ওয়াশিংটন।
ছাড়া পাওয়া ওই মার্কিনির নাম সুয়েদি মুরেকেজি, যিনি রাশিয়ার হাতে ধরা পড়ার আগে ‘আমাদের লোকজনকে’ সাহায্য করছিলেন, বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের প্রধান আন্দ্রিই ইয়ারমাক।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মুরেকেজি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে ছিলেন।
নিরাপত্তাজনিত কারণে ছাড়া পাওয়া মার্কিনির নাম প্রকাশ না করে জন কারবি সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের ছাড়া পাওয়ার খবরকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”