বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম, মসলার দরও বাড়তি


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: January 27, 2023 18:18:56 | Updated: January 28, 2023 16:48:25


ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

চাল, ডাল, তেলের দামে উত্তাপ তো কমছেই না, এর মধ্যে আরও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের দাম। সেইসঙ্গে রমজানের আগেই চড়তে শুরু করেছে মসলার বাজার।

শুক্রবার মিরপুরের শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ঘুরে কেজিতে প্রায় ১০-১৫ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

লাল-সাদা দুই ধরনের ডিমের দামই বাড়ছে; ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা উঠেছে। ছবি খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তবে সোনালি মুরগি আগের মতই ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ২১০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি, খাসির কেজি ১০০০ টাকা।

শীতের সবজি কিছুদিন স্বস্তি দিলেও মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই দাম বাড়ছে। ‘সরবরাহ ঘাটতি’ কারণ দেখিয়ে বাড়তি দাম হাঁকছেন সবজি বিক্রেতারা।

শেওড়াপাড়া বাজারে আসা গৃহিণী মেহের নিগার বলেন, “মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে চাকুরিজীবীর ফিক্সড ইনকাম, কিন্তু দাম কখনো ফিক্সড থাকে না। এসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ, সংসার খরচ চালানো লাগে। খুব হিসেবে করে চলছি, আর স্বপ্ন দেখছি, হয়তো কোনোদিন সব হাতের নাগালে আসবে।“

ছুটির দিনে শেওড়াপাড়া বাজারে এসে ক্রেতা এবাদত হোসেন চিনির দাম বৃদ্ধি নিয়ে বলেন, “দেখেন কালকে বলল, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চিনির দাম বাড়বে। কিন্তু বাজারে আজকেই চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা হয়ে গেছে।”

আর বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চিনিই নেই। চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকার সরল অর্থনীতির কথাই তাদের মুখে।

অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় বৃহস্পতিবার চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

তাতে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম চার টাকা বেড়ে ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

অবশ্য চিনির খুচরা বাজারে এসবের কোনো হিসাব নেই। প্রতি কেজি চিনি ১২০ টাকার কমে বিক্রি হতে দেখা যায়নি কোনো বাজারে।

মিরপুরের কাজীপাড়া বাসট্যান্ড এলাকায় এক মুদি দোকানে আসা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি শাহিন আলম বলেন, “চাল-ডালের দামই তো অনেক বেশি। এগুলোর দাম বাড়লে অল্প আয়ের মানুষের পক্ষে ভালো কিছু কেনা কঠিন। গরুর মাংস, দেশি মুরগির চিন্তা বাদই দিলাম; এখন তো ডিম, ফার্মের মুরগিরও দাম বাড়তি।”

একই এলাকার দোকানি আসলাম মিয়া বলেন, “মানুষের সাথে এখন দাম নিয়ে অনেক কথা বলতে হয়। দাম তো কমে না কিছুর, আর না কমলেও আমরাও লসে বিক্রি করতে পারি না।”

মোটা চালের দাম গত সপ্তাহে দু-এক টাকা কমলেও কেজিতে তা ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম একই রয়েছে চিকন চালের।

বাজারে বিআর ২৮ চাল কেজিতে ৬০ টাকা, নানা পদের মিনিকেট কেজিতে ৭২-৭৫ টাকা আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা আটা ৬০-৬৫ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে বাড়তে শুরু করেছে মসলার দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার কেজি ৫৫০ থেকে বেড়ে ৬৪০ টাকা, লবঙ্গ ১৩০০ থেকে বেড়ে ১৪৪০ টাকা, গোলমরিচ ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা, দারুচিনি ৩৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২০ টাকা হয়েছে।

এলাচি মানভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, এক মাসের মধ্যে এর দাম বাড়েনি। প্রতি কেজি আদা মানভেদে ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর-২ কাঁচাবাজারের মুদি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বললেন, পাইকারিতে ১৫ দিন ধরে আদা-রসুনের দামে অস্থিরতা চলছে। রসুনের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে যে শুকনো মরিচ প্রতি কেজি ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে তা এখন ৩৫০-৪৫০ টাকা ছুঁয়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলার বাজার অনেকাংশেই আমদানির্ভর, তাই আমদানি না বাড়লে সংকট আরও বাড়বে।

পুরান ঢাকার চকবাজারের মৌলভীবাজারে পাইকারি মসলার দোকান মেসার্স হাবিব অ্যান্ড ব্রাদার্সের মুখপাত্র বলেন, “বাইরে থেকে তো মসলা আসছে না। বাজারে মসলা না থাকলে দাম বাড়তেই থাকবে। বাজারে গরম মসলার দামও ওঠানামার মধ্যে আছে।

“জিরা বেড়ে গেছিল, এখন একটু কমেছে। লবঙ্গ বাড়ছে, এলাচির দাম আগেই বাড়তি, আগের মতোই আছে।”

মিরপুরের শাহ আলী এন্টাপ্রাইজের ম্যানেজার মো. আতাউর বলেন, “মরিচের গুড়া এখন আমাদের এখানে ৩৭০ টাকা (কেজি)। হলুদের দাম বাড়ে নাই। তবে ধনিয়ার দাম বাড়তি।”

ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের সম্পাদক কাজী মো. আব্দুল হান্নান বলেন, "আমাদের সরকার সমন্বয়ের কথা বলছে। সেই সমন্বয়টা তো আর হয় না। এটা একটা পলিটিক্যাল জার্গন হয়ে গেছে৷ আমাদের দেশের রীতি হলো দাম একবার বাড়লে আর কমে না।”

তিনি বলেন, “আমাদের মানুষের আয় বাড়াতে হবে। আয় না বাড়িয়ে সমন্বয়ের কথা বললে হবে না। ব্যবসায়ীদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা নিজেদের মত দাম নির্ধারণ করছে।"

মসলার দাম বাড়া প্রসঙ্গে হান্নান বলেন, "এলসি মার্জিন ১০০ শতাংশ করার ফলে এসব পণ্য এনে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা যাচ্ছে না। বাজারে পণ্য না আসলে দাম বাড়বেই। এলসি করতে দিতে হবে। তা না হলে দাম কমবে না৷"

Share if you like