এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের দাম দুইবার বাড়ানোর সমালোচনা করে বর্ধিত মূল্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী ও তুঘলকি’ আখ্যায়িত করে দলটি বলেছে, এর ফলে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, “সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও ভ্রান্ত নীতির কারণে এমনিতেই জনগণ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। এর মধ্যে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের গণবিরোধী, তুঘলকি ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।”
জানুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ১৯ দিনের মাথায় ফেব্রুয়ারির জন্য আবার ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে মঙ্গলবার। এখন থেকে নিয়মিত বিরতিতে দাম সমন্বয় হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
আগে বছরে সর্বোচ্চ একবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুযোগ পেত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি। পরে নীতি পরিবর্তন করে বছরে একাধিকবার মূল্য সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। সেখান থেকে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের পথ সুগম করা হয় গত বছরের শেষে। এরপর একমাসের মধ্যেই একবার গ্যাসের দাম এবং দুইবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ফেলল সরকার।
চলতি বছর প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় গত ১২ জানুয়ারি। খুচরা পর্যায়ে দাম গড়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর ভারিত গড়ে ইউনিটের দাম দাঁড়ায় ৭ টাকা ৪৮ পয়সা। এরপর ফেব্রুয়ারির জন্য তা আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিটের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা।
ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।
ফখরুল বলেন, “মাত্র ১৯ দিন আগে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম এক দফায় বৃদ্ধি করেছে। ১৯ দিন পর আবার খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি জিনিষের দাম আবারো বৃদ্ধি পাবে। এই বোঝা জনগণ আর সহ্য করতে পারবে না।”
বিএনপি নেতা মনে করেন, এই সরকার ‘জনগণের নয়’। তাই তারা ‘দুর্দিনে’ বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, সারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বার বার বাড়াচ্ছে।
দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের যে ব্যাখ্যা, তাকে ‘নির্লজ্জের মতো মিথ্যাচার’ বলেছেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “গণবিরোধী সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গত বছর রেকর্ড হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দাম একমাসেই রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।”
জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থেকে সরকারের হাতে নেওয়াকে ‘খুচরা চালাকি’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব।
তার ভাষায়, “এতদিন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গণশুনানি করে দাম বাড়াত। সেখানেও সরকারের ইঙ্গিতে দাম বাড়ানো হত। এবার সরকার নিজেই এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে দাম বাড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে।”
জনগণকে বিদ্যুৎ খাতে ‘সীমাহীন দূর্নীতি ও অনিয়মের’ মাশুল দিতে হচ্ছে মন্তব্য্য করে তিনি বলেন, ‘অনুগত লোকদেরকে লাভবান করতে তাদেরকে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র করিয়ে উৎপাদন না করেই তাদেরকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে জনগণের টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বানানো হচ্ছে। সরকার ও তার অনুগতদের দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। এই পকেট কাটা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ আজ জেগে উঠেছে।”
বিএনপির তোলা ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি যে বিভাগীয় সমাবেশ হচ্ছে, সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান ফখরুল। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।