ডিম-মুরগির বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের দায়ের করা মামলার শুনানিতে এসে দুটি প্রতিষ্ঠান বলল, তারা এসব পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।
কমিশন আনুষ্ঠানিক ভাষ্যে বলছে, তাদের অনুসন্ধানী দল নিজস্ব অনুসন্ধান, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলাগুলো দায়ের করেছে।
তবে শুনানি চলাকালে অভিযুক্ত দুই কোম্পানির বক্তব্য শোনার কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলামের কথায় মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে সংশয়ের সুর ফুটে উঠেছে।
ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগে গত সপ্তাহে ৪৪টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। চাল, আটা-ময়দা, সাবান, ডিটারজেন্ট বা গুঁড়া সাবান, ডিম ও মুরগির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে এসব কোম্পানি ব্যবসা করছে।
গত সোমবার থেকে এসব মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ২৬টি মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষ থেকে আলাল পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
কোম্পানির প্রতিনিধি নুরুল আলম শুনানিতে বলেন, তারা মুরগি ও মাছের খাবার উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত হলেও ডিম-মুরগি উৎপাদনের কোনো ব্যবসা তাদের নেই। সুতরাং এই মামলার জন্য যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা সরবরাহের কোনো উপায়ও তাদের কাছে নেই।
এসময় কমিশনের সদস্য নাসরিন বেগম বলেন, “ফিডের ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মুরগির মামলা কীভাবে হল?
“আপনারা মুখে যে বক্তব্য উত্থাপন করলেন, তা অ্যাফিডেভিড করে লিখিত আকারে আগামী শুনানির আগে কমিশনে জমা দিন। মুরগির ব্যবসায় যুক্ত না থাকলে এই মামলা নিশ্চয়ই আপনাদের ক্ষেত্রে কার্যকর থাকবে না।”
একইভাবে এদিন পিপলস ফিড নামের একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ডিমের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করার অভিযোগে মামলার শুনানি হয়।
বার্তাবাজার পত্রিকার ২০ অগাস্টের প্রতিবেদন ‘১৫ দিনে ডিম ও মুরগির বাজার থেকে ৫১৮ কোটি টাকা লুট’, ২২ অগাস্ট সমকালের প্রতিবেদন ‘ডিমের কারসাজিতে জড়িতদের শাস্তি চায় এফবিসিসিআই’, ১৯ অগাস্ট ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদন ‘ডিমের কারসাজিতে সাভারের দুই ব্যবসায়ীর হাত’ এবং কমিশনের নিজস্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
তবে পিপলস ফিডের প্রতিনিধি সাইদুর রহমান সাঈদ বলেন, পিপলস ফিড নামে আরজেএসসিতে তাদের যে কোম্পানি নিবন্ধিত আছে, সেটি ডিম-মুরগির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। সুতরাং এই মামলাটি কীভাবে তাদের নামে করা হল, তা তারা বুঝতে পারছেন না।
তবে তিনি বলেন, “আমাদের পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি নামের আরেকটি কোম্পানি রয়েছে, যারা ডিম-মুরগির উৎপাদনের ব্যবসা করে থাকে। দুটি কোম্পানি পৃথকভাবে পরিচালিত হয়।”
আবার ডিম-মুরগি উৎপাদন করলেও পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি বাজারে মাংস হিসাবে গণ্য হওয়া মুরগি বিক্রি করে না বলে জানান সাইদুর।
তিনি বলেন, “আমরা ব্রয়লার মুরগির মা-বাবাদের লালন পালন করি এবং পোল্ট্রি ফার্মগুলোর কাছে একদিনের বাচ্চা বিক্রি করি। মাংস হিসাবে কোনো মুরগি আমরা বাজারে বিক্রি করি না। সুতরাং অনুসন্ধানে যেসব অভিযোগ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আমাদের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযোজ্য, বুঝে আসছে না।”
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল তখন বলেন, “উই আর রিয়েললি কনফিউজড। পিপলস ফিড বাজারে ডিম সরবরাহ না করলে তাদের নাম কীভাবে আসলো?”
কমিশনের সদস্য নাসরিন এই সময় বলেন, “তাহলে এটা নিয়ে আরও অনুসন্ধান চালাতে হবে। তারা যদি এই ব্যবসায় যুক্ত না থাকেন, তাহলে তো অব্যাহতি পাবেন। আর যদি নতুন করে যে সিস্টার কনসার্নের নাম বলা হলো- পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি’- তারা যদি এই ব্যবসায় যুক্ত থাকে, তাহলে মামলাটি পিপলস হ্যাচারির নামে রূপান্তর হয়ে যাবে।”
এই সময় পিপলসের আইনজীবী বলেন, “আজকে আমাদের সাবমিশন হচ্ছে মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়া। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমরা আগামী শুনানির আগে উত্থাপন করব।”
আগামী ২৪ অক্টোবর আলাল পোল্ট্রি ফিড এবং ২ অক্টোবর পিপলস ফিডের মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।