বাংলাদেশের শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বুধবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অত্যাধুনিক এই হাসপাতালে নানা ধরনের সুবিধা থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
নতুন এই হাসপাতালে বিশেষায়িত সেবার পৃথক পাঁচটি কেন্দ্র থাকবে, এ ছাড়া থাকবে ১০০ শয্যার আইসিইউ ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ১০০টি শয্যা।
কী কী সুবিধা থাকবে
বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন " হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ চালু হতে এক মাস সময় লাগবে। আর পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হতে তিন মাস সময় লাগবে।"
তবে তিনি বলেন "এই হাসপাতাল সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কেউ যেন মনে না করেন এটা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ইমার্জেন্সি ২৪ঘন্টা খোলা থাকবে এবং অন্যান্য বিভাগ অফিস টাইম মেনে খোলা থাকবে।"
এই হাসপাতালকে কেন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে মি. আহমেদ বলেন " এখানে একই ছাদের নিচে সবরকম (চিকিৎসা) সুবিধা পাবেন। এছাড়া অত্যাধুনিক যন্ত্র-পাতি আনা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যেমন থাকবেন তেমনি থাকবেন বিদেশি ডাক্তাররাও।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নয়টি ফ্লোর এবং তিনটি বেজমেন্ট ফ্লোর থাকবে।
এই হাসপাতালে ৭৫০টি বেড থাকবে যার মধ্যে থাকবে একশটি আইসিইউ বেড এবং একশটি ইমার্জেন্সি বেড।
উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন "অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য এ হাসপাতালকে প্রধানত পাঁচটি স্পেশালাইজড সেন্টারে ভাগ করা হয়েছে।
''এগুলো হবে জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপনকেন্দ্র, কিডনি রোগকেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র।"
তিনি বলেন "এসব কেন্দ্রে যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে তাতে করে রোগীর অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। সব ধরনের পরীক্ষা করে একই ছাদের তলায় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।"
অন্যান্য সুবিধা
ফার্মেসি ছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার দোকান ও ব্যাংকিং সুবিধাও হাসপাতালের মধ্যে থাকবে।
চিকিৎসকদের জন্য পৃথক ক্যাফেটেরিয়া ছাড়াও থাকবে তিনটি ক্যাফেটেরিয়া থাকবে যেটা রোগী এবং তার আত্মীয়রা ব্যবহার করতে পারবেন।
থাকবে লন্ড্রি হাউস এবং প্রায় ২৫০টি গাড়ি রাখার পার্কিং সুবিধা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগী ভর্তি, রোগীর তথ্য সংরক্ষণ, চিকিৎসা এবং সার্বিকভাবে হাসপাতালের নিরাপত্তায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ
হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছে উন্নত এই বিশেষ হাসপাতালের প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে দুই উপায়ে।
১. হাসপাতাল নির্মাণ
২. উন্নত প্রশিক্ষণ
মি. আহমেদ বলছেন শুধু যে উন্নত অবকাঠামাগত ব্যবহার করা হচ্ছে তাই না এখানে ডাক্তারদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে।
এই স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য চিকিৎসকসহ প্রায় মোট ৬১০জন স্বাস্থ্য কর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হবে। হাসপাতালের প্রশিক্ষণ বিষয়টিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনিশিয়ান এবং প্রশাসনের লোকসহ থাকবেন ১৪০জন, যাদের কোরিয়াতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
আর দ্বিতীয় ভাগে হাসপাতালের সার্ভিস চালু হওয়ার পর, স্থানীয় ৪৮০জনকে বাংলাদেশে ইন-হাউজ ট্রেইনিং দেয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া হতে মোট প্রায় ৫৬ জন কোরিয়ান বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে আসবেন। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণ সার্ভিস দেবেন।
কর্তৃপক্ষ দাবি করছে হাসপাতালটি চালু হলে রোগীরা বাংলাদেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন।
ফলে চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না বলে জানাচ্ছেন মি. আহমেদ।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক ২০১৬ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে এই অত্যাধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল।