জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত কিংবা বাদ দেওয়া সবাইকে ফিরিয়ে আনতে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে ‘আদেশ’ দিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
চিঠিতে রওশন জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারা ‘গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থি এবং স্বেচ্ছাচারিমূলক’ আখ্যা দিয়ে সেগুলো স্থগিত করার ‘আদেশ’ দেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ এই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ওটি ম্যডামই পাঠিয়েছেন।”
এই চিঠির বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন তিনি এই চিঠির বিষয়ে কিছু ‘জানেন না’।
তিনি বলেন, “প্রধান পৃষ্ঠপোষক তো আদেশ দিতে পারেন না। তিনি আহ্বান করতে পারেন।”
এদের নাম উল্লেখ করে চিঠিতে রওশন বলেছেন, “আমার নির্দেশনা অনুযায়ী এদেরসহ দেশজুড়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত, বহিষ্কার ও নিষ্ক্রিয় করে রাখা সকল নেতাকর্মীদের এই আদেশ জারির পর হতে যার যার আগের পদ পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।”
জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে দেবর জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে রওশন তাতে আপত্তি তোলেন। এরশাদের আসনে উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়।
তখন দলের ভাঙন ঠেকাতে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জি এম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান থাকবেন। আর রওশন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। আর সংসদে জি এম কাদের হবেন উপনেতা, আর দলে রওশন থাকবেন প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদে।
অসুস্থতার জন্য বিদেশে থাকা রওশন সম্প্রতি কাউন্সিল ডাকলে বিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর পাল্টায় রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে বাদ দিতে তৎপর হন কাদের। বহিষ্কার করেন রাঙ্গাঁ ও জিয়াউল হক মৃধাকে।
এরপরই ‘আদেশ’ দিয়ে চিঠি পাঠালেন রওশন।
চিঠিতে রওশন বলেন, “জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতার সংরক্ষক হিসেবে পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ এর উপধারা-১, প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতা এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ধারা-২০ এর উপধারা ১ (১)-এর ক. ২ এর ক, খ, গ এবং উপধারা-৩ এ বর্ণিত অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিমূলক বিধান স্থগিত করে জাতীয় পার্টির অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া সকল নেতাকর্মীকে পার্টিতে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দেওয়া হচ্ছে।”
এর আগে রওশন যখন কাউন্সিল ডেকেছিলেন, তখন জি এম কাদেরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তার এখতিয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের নেই।
বহিষ্কারের ক্ষেত্রেও জি এম কাদের তার চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। এই ক্ষমতার প্রয়োগ এরশাদের সময় হরহামেশা হত এবং তা নিয়ে সমালোচনাও ছিল।
বহিষ্কৃত হওয়ার পর রাঙ্গাঁও জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নেই বলে অভিযোগ করেন; যদিও এরশাদ থাকাকালে একই রকম ক্ষমতা প্রয়োগ করেই রাঙ্গাঁকে মহাসচিব করেছিলেন।
রওশন চিঠিতে জাতীয় পার্টিতে চেয়ারম্যানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে বলেছেন, “যা মৌলিকভাবে গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থি এবং স্বেচ্ছাচারিতামূলক।
“যে ধারা অনুযায়ী আপনি (কাদের) যখন-তখন তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত যে কাউকে দায়িত্ব থেকে বিনা নোটিসে শোকজে অব্যাহতি ও বহিষ্কার করে একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।”
“সারা দেশের নেতাকর্মীরা গঠনতন্ত্রে বর্ণিত এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ধারার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ধারা-উপধারা বাতিল এখন লাখ লাখ পল্লীবন্ধু কর্মী- সমর্থকদের সময়ের দাবি,” বলেছেন রওশন।
রওশন তার আহূত দলের দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত গঠনতন্ত্রের সব প্রকার ‘অগণতান্ত্রিক ধারা-উপধারা’ স্থগিত ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেছেন, “পার্টির মধ্যে অগণতান্ত্রিক ভাব-আবহ সৃষ্টির কারণে নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পার্টি খণ্ডিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।”