এমন শারদ দিনেও সকালটা ছিল উষ্ণ, রোদেলা। তার মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় গান-নৃত্য আর কবিতায় শরতের রূপকে মেলে ধরল ছায়ানট।
শুক্রবার ছুটির দিনে কোলাহলের ঢাকা শহরের তখনও ঘুম ভাঙেনি। চারুকলার গাছগাছালিতে সবে ছুঁয়েছে সূর্যকিরণের স্পর্শ। ততক্ষণে বকুলতলার মঞ্চ কাশফুলসহ নানা প্রাকৃতিক অনুষঙ্গে সেজে প্রস্তুত, ছায়ানটের শিল্পীরাও তৈরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি সম্ভার নিয়ে।
সকাল ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হয় সম্মেলক নৃত্যে; ‘ওগো শেফালি বনের মনের কামনা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন ছায়ানটের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মহামারীর গেল দুই বছরে ছেদ পড়েছিল উন্মুক্ত আবহে প্রকৃতি বন্দনায়, অনুষ্ঠান হয়েছিল অনলাইনে। এবারে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে বকুলতলার মঞ্চে ফিরল ছায়ানটের শারদ উৎসব।
সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বললেন, “ছায়ানট প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের পাশাপাশি বর্ষামঙ্গল, শরতের অনুষ্ঠানও নিয়মিত আয়োজন করে। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষকে একত্রিত করার জন্যই মূলত প্রকৃতি পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হয়। আমাদের ধর্ম যাই হোক, আমরা সকলে প্রকৃতির সন্তান। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিতে চাই।”
দলগত নৃত্যের পর ‘শরত আলোর কমলবনে’ ও ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’ রবীন্দ্রনাথের গান দুটি শোনান দীপ্র নিশান্ত ও নাঈমা ইসলাম নাজ। আরও কিছু গানের ফাঁকে চলে নৃত্য ও আবৃত্তি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিচিত্র’ প্রবন্ধ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর। ছায়ানটের শিল্পী সুমনা বিশ্বাস আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘শরৎ’।এছাড়া মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দারর গাওয়া রবি ঠাকুরের আরেকটি গান ‘তোমরা যা বল তাই বল’ এর সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করে সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা তাথৈ।
ক্ষুদে শিল্পীদের দল পরিবেশন করে ‘শরতে আজ কোন অতিথি’ ও ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ গান দুটি। সঙ্গে নাচও পরিবেশিত হয়। সম্মেলক গানের পরিবেশনায় ‘আমরা বেঁধেছি কাঁশের গুচ্ছ’ ও ‘তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে’ পরিবেশন করে ছায়ানটের বড়দের দল।
অনুষ্ঠানে একক গানের পরিবেশনায় অসীম দত্ত শোনান ‘তুমি ঊষার সোনার বিন্দু; অভয়া দত্ত শোনান ‘তোমার সোনার থালায় সাজাবো আজ’, এটিএম জাহাঙ্গীর শোনান ‘আমি চাহিতে এসেছি শুধু একখানি’, সেমন্তি মঞ্জরি শোনান ‘আজি মেঘ কেটে গেছে’, তাহমিদ ওয়াসিফ ঋভু শোনান ‘কেন যে মন ভোলে আমার’, সুতপা সাহা শোনান ‘কার বাঁশি নিশি ভোরে’, সেঁজুতি বড়ুয়া শোনান ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’ এবং মাকসুরা আখতার শোনান ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে’।
সবশেষে ঐতিহ্য অনুযায়ী জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠানে যন্ত্রানুসঙ্গে তবলায় ছিলেন এনামুল হক ওমর, মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার, এস্রাজে অসিত বিশ্বাস, মন্দিরায় প্রদীপ রায়।