ফায়ার টর্নেডো: অগ্নিদানবের ন্যায় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ


শবনম জাবীন জেবা | Published: September 29, 2022 11:53:31 | Updated: September 29, 2022 18:46:04


ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

২০২২ সালের আগস্ট মাসে ক্যালিফোর্নিয়াতে সর্বশেষ ফায়ার টর্নেডো হয়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘স্যাম টর্নেডো।’ লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি ফায়ার ডিপার্টেমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, এই টর্নেডোতে প্রায় ১৫০ একর বিস্তৃত এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে এতে কোনো মানুষ বা ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কেটিএলএ ৭৫ এর তথ্যানুসারে, এই অগ্নিদানব’কে কাবু করার জন্য প্রায় ২০০ জনের বেশি দমকল কর্মী নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।  

তবে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ংকর ফায়ার টর্নেডো হয়েছিল ১৯২৩ সালে। জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক ভূমিকম্পের পর বিশাল আরবান ফায়ার (ছোট বা বড় শহরগুলোতে যেখানে আগুন লাগার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং আশেপাশের স্থানে যা রয়েছে, যেমন - ভবন বা যানবাহন সেসবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে) ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ধীরে ধীরে ফায়ার টর্নেডোর রূপ নেয়। এর ভয়াবহতা এতোই তীব্র ছিল যে মাত্র মিনিট পনেরোর মধ্যে প্রায় ৩৮,০০০ জন মানুষ এতে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।

শুধুমাত্র শহুরে এলাকা নয় বনাঞ্চলেও এই ফায়ার টর্নেডো রীতিমত এক আগ্রাসী অগ্নি দানবে পরিণত হয় এবং গাছপালা পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে।

ফায়ার টর্নেডো খুব একটা হতে দেখা যায় না, একে বিরল ঘটনা বলা চলে। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দিনদিন খরা ও অনাবৃষ্টি বেড়ে চলেছে ফলে বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন যে ফায়ার টর্নেডোর মতো দুর্যোগ বাড়তে পারে।

ফায়ার টর্নেডো কী?

আগুন ও তীব্র বাতাস - এ দুইয়ের সমন্বয়ে প্রচন্ড তাপ ও এক ধরনের ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। এর তীব্রতা বাড়তে বাড়তে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। আগুনের লেলিহান শিখা এক ঘূর্ণায়মান চুঙ্গির (ফানেল) মতো মাটি থেকে যেন আকাশ অবধি বিস্তৃত হয়ে উঠে।

ফায়ার টর্নেডো বাতাস থেকে সৃষ্ট টর্নেডোর মতোই শক্তিশালী ও সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে এগিয়ে চলে।

যেহেতু ফায়ার টর্নেডো কুন্ডলাকৃতির হয়, তাই এর প্রশস্থতার একটা হিসেব দাঁড় করানো যেতে পারে। ব্যাসের হিসেবে বললে এটি গড়ে প্রায় ১ মিটার থেকে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আর গতিবেগ গড়ে প্রায় ১০ থেকে ৫০ মিটার/সেকেন্ড হয়।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে এমন ভয়াবহ একটি দুর্যোগ হওয়ার সম্ভাব্য স্থান কী কী হতে পারে?

বন্যভূমি, শহুরে এলাকা, তেলখনি, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয় এমন এলাকায় ফায়ার টর্নেডো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও এই টর্নেডো হওয়ার আশংকা থাকে, যেমন-ধূলাঝড়, প্রবল বৃষ্টি বা টর্নেডো।

ফায়ার টর্নেডোর সময় কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?

ফায়ার টর্নেডো সৃষ্টি ও বিস্তারের মাঝে বেশকিছুটা সময়ের ব্যবধান থাকে ফলে মানুষজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার একটা সুযোগ পায়, তবে সেটা অবশ্যই পরিস্থিতি সাপেক্ষে এবং দ্রুততার সাথে করতে হবে। ফায়ার টর্নেডোর আশেপাশের তাপমাত্রা বেড়ে ২,০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

এই টর্নেডোর চারপাশে প্রচুর পরিমানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, পোড়া আবর্জনা ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, তাই নাক কাপড় দিয়ে ঢেকে সরে যেতে হবে ফলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে না।

এমন অবস্থায় কোথায় আশ্রয় নেয়া নিরাপদ?

ফায়ার টর্নেডোর ধংসযজ্ঞ রীতিমত ভয়াবহ, তবে কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে এই টর্নেডো ছড়াতে পারে না যেমন-ইটের দালান বা পানি রয়েছে এমন খোলা জায়গা। 

 

শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

zabin860@gmail.com

Share if you like