নিত্য প্রয়োজনীয় ৯টি পণ্যের দাম প্রতি মাসে বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার ১৮ দিনের মাথায় তাতে আইনি জটিলতা দেখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “আমরা শুধু সয়াবিন তেল ও চিনির দাম বেঁধে দিতে পারি। বাকি পণ্যের দাম কৃষি মন্ত্রণালয় ঠিক করবে। এ বিষয়ে আইনি ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে। দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা আসতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
গত ৩০ অগাস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
তখন জানানো হয়েছিল, ১৫ দিনের মধ্যে ট্যারিফ কমিশন এসব পণ্যের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে একটা যৌক্তিক মূল্য ঘোষণা করবে।
ওই বৈঠকের দুই সপ্তাহ পেরোনোর পর আরও সাত দিন সময় লাগবে বলে শুক্রবার জানান মন্ত্রী।
“আরও হয়তো ৭ দিন সময় লাগবে এ কাজে। আপাতত রড, সিমেন্টের পাশাপাশি চাল, গম (আটা, ময়দা), ভোজ্যতেল (সয়াবিন, পাম), পরিশোধিত চিনি, মশুর ডাল, পেঁয়াজ ও ডিমের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে আরও নতুন নতুন পণ্য এর সঙ্গে যোগ করা হবে।”
একদিন বাদেই আইনি জটিলতার কথা জানিয়ে শনিবার টিপু মুনশি বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে যাতে কৃষি মন্ত্রণালয় দর বেঁধে দেয়, সেজন্য চিঠি দেওয়া হবে।
খাদ্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে প্রয়োজনে আমদানি করার পক্ষপাতী বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় যদি পজিটিভ হয়, তাহলে আমরা খাদ্যপণ্য আমদানি করে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারি। আমি এখনও আমদানি করে ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দর কমানোর পক্ষে।”
তবে পুরোপুরি আমদানি নির্ভর না হয়ে দেশীয় উদ্যোক্তাদেরও স্বার্থ রক্ষা করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ রয়েছে, তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। উৎপাদন খরচ সামাল দিয়ে তাদেরও টিকে থাকতে সহায়তা করতে হবে।
“পাশাপাশি ভোক্তাদের আমরা কী দামে পণ্য সরবরাহ করতে পারি…কিভাবে তাদের তুলনামূলক কম দামে পণ্য দিতে পারি, সে বিষয়েও আমাদের ভাবতে হবে। করণীয় ঠিক করতে হবে।”
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়তে গিয়ে দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে একই সময়ে সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় আগামী বছর বিশ্বে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, “ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে। এখনও সামগ্রিক দিক দিয়ে আমরা স্বস্তির জায়গায় নেই। খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বিশ্বে। সত্যিকার অর্থে চিন্তার ব্যাপার।
“আমরা সজাগ আছি এ বিষয়টি নিয়ে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষিতে আমরা বেশি মনোযোগ দিব। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারলে খাদ্য সমস্যা দেখা দেবে না।”
ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ভারতের ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, “এবার বাস্তবায়ন হবে। ভারত খুবই আগ্রহী। আমরা ভুটান ও নেপালে সড়ক, নদী ও রেলপথে পণ্য পরিবহন করতে পারব। রেলপথে ট্রানজিট নিতে ভারত বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে।”
বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট রপ্তানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক বসানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ভারত অ্যান্টি ডাম্পিং ট্যারিফ বসাতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ভারত সফরের সময়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন। নরেন্দ্র মোদী তাৎক্ষণিক ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়টি নিয়ে সমাধান করতে বলেছেন।”
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই এ সমস্যা সমাধানে আশাবাদী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতে না গিয়ে আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার।”
ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা চীন থেকে আমদানিতে কিছুটা সরে এসেছি বটে, কিন্তু আমাদের কাঁচামাল ও ভারি মেশিনারিজ তাদের কাছ থেকেই আনতে হয়। …ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। এখন হ্যান্ডমেড গার্মেন্টস রপ্তানির বাজার হতে পারে ভারত।
“যতোদিন না আমরা ভারি শিল্প তথা মেশিনারিজ দেশে উৎপাদন করতে না পারবো, ততোদিন তাদের উপর নির্ভরশীলতা থাকবে। এক সময়ে তৈরি পোশাকের বোতাম, কার্টনসহ সবকিছুই চীন থেকে আনতে হতো, এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে।”
বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমার থেকে গোলা নিক্ষেপ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা উত্তেজনাকর অবস্থা চাই না। তাদের সঙ্গে আমাদের সমস্যা চলছে। কিন্তু এর পরও চাল আমদানিসহ বাণিজ্য চলছে।“
চার বছর পর বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সুবিধা বাতিল হবে।
সেই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের আমদানি একটু চাপে পড়বে, আর রপ্তানিতেও সুবিধা হারাব- এ কথা ঠিক। এজন্য এখনই আমাদের ভাবতে হচ্ছে প্রতিটি দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা এফটিএ ও পিটিএ চুক্তি করার।”
ওভারসিজ করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ওকাব) আয়োজিত ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক কাদির কল্লোল ও সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম ।