বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের বিপরীতে সারাদিন ভারী গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পেরেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা; এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মিয়ানমার থেকে আসা গোলার বিস্ফোরণে রোহিঙ্গাদের হতাহতের ঘটনার পর শনিবার সকালে সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তবে শনিবার কোনো গোলা বাংলাদেশের সীমানায় এসে পড়েনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সীমান্ত পরিস্থিতি জানিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে স্থানীয়দের সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে।”
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা ৬২১টি পরিবারের চার হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এখনও তুমব্রু সীমান্তের কোণাপাড়ার শূণ্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে।
শুক্রবার রাতে মিয়ানমার থেকে আসা গোলার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরিত হয়। এতে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে সকালে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ‘মাইন’ বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যায়।
আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের মধ্যে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের নিক্ষিপ্ত গোলা বাংলাদেশের সীমানায় এসে পড়ে। তবে সেগুলো বিস্ফোরিত না হাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শুক্রবার রাতের এ ঘটনার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
এই অবস্থার মধ্যে শনিবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি কাছাকাছি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ আসে। কখনও ১০ মিনিট পর পর, কখনও আধা ঘণ্টা পর গুলি ও গোলাবারুদের শব্দ আসে। তবে কোনো গোলাবারুদ আমাদের সীমান্তের এপারে এসে না পড়ায় একটু স্বস্তি।”
তবু দীর্ঘদিন ধরে গোলাগুলির কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে সবসময় ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। স্থানীয়দেরকে সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় সকালে মাইকিং করা হয়েছে বলেও জানান ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো।
সকাল থেকেই কোণাপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পারছেন বলে জানান তুমব্রু-কোণাপাড়া সীমান্তের শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দলনেতা (মাঝি) দিল মোহাম্মদ।
বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ভারী অস্ত্রের শব্দ শুনেছি। সারাদিন একটু পর পর করে গুলি চলে। ১০ মিনিট আগেও একটা শুনছি। এসব গুলি ও ভারী অস্ত্রের শব্দ চলছে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে এক থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে।”
গোলা বিস্ফোরণে আহতদের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান রোহিঙ্গা নেতারা। তবে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত চেষ্টা করেও সেই হাসপাতালের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি। গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় দিয়েও সেখানে প্রবেশ করা যায়নি।