পবিত্র সৌদি আরবের জমজম কূপের পানি বাংলাদেশে বিক্রি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দেশের ‘ভাবমূর্তি রক্ষায়’ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, এখন কোনো দোকানে এই পানি বিক্রি করা হলে সেই দোকান সিলগালা করে দেওয়া হবে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মক্কা নগরীতে মসজিদ আল-হারাম প্রাঙ্গণের মধ্যে কাবার ২০ মিটার পূর্বে অবস্থিত জমজম কূপের পানিকে পবিত্র মনে করে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।
দেশ থেকে যারা হজে যান, তারা বোতলে করে ওই পানি নিয়ে আসেন। এর বাইরে জমজমের পানি দেশে এনে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে, বিশেষ করে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে।
সোমবার কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ‘পবিত্র জমজম কূপের পানি খোলা বাজারে বিক্রয় সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা’ শীর্ষক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
এই সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জমজমের পানি বিক্রি আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, “পবিত্র জমজমের পানি বাংলাদেশে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে, এমন তথ্য সৌদি আরব জানতে পারলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।”
তবে এটা স্থায়ী সিদ্ধান্ত নয়। এই পানি বিক্রি করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
সফিকুজ্জামান বলেন, “এভাবে বিক্রি করা কতটা যৌক্তিক, সেই বিষয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের। তাদের থেকে এ বিষয়ে ইসলামের ধর্মীয় ব্যাখ্যা জানার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“তবে আপাতত বায়তুল মোকাররম মার্কেটে এ দুই দিন পানি বিক্রি বন্ধ থাকবে। এই সময় বায়তুল মোকাররমে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে। তারা যদি আমাদের কাছে রিপোর্ট করে, যে কেউ লুকিয়ে এই পানি বিক্রি করছে, তাহলে দোকান সিলগালা করে দেওয়া হবে।”
তিনি জমজমের পানি বিক্রয়কারীদের উদ্দেশে বলেন, “জমজমের পানি বিক্রি করতে হলে, কোন সোর্সে পেয়েছেন, কীভাবে পেয়েছেন, তা উল্লেখ থাকতে হবে।”
এক টেলিভিশনের করা এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রোববার দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায় অভিযান চালায় করে ভোক্তা অধিদপ্তর। তাতে দেখা যায়, ২০০ থেকে ২৫০ জন আতর-টুপি-গোলাপজল ব্যবসায়ী জমজম কূপের পানি বিক্রি করছেন। প্রতি লিটার পানি দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হজ থেকে ফেরার পর হাজিরা যে জমজম কুপের পানি নিয়ে আসেন, পরে মোয়াল্লেমরা সেই পানি বিক্রি করেন। সেটাই কিনে এই মার্কেটে বিক্রি হয়।
বায়তুল মোকাররমের মোহাম্মদ সুলতান কবিরাজ নামক এক ব্যবসায়ী বলেন, “মোয়াল্লেমরা দুই একটা বোতল এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়াইয়া আইনা এখানে দেয়। এখানে যে দোকানে নিয়া আসে, সে দোকানদার কম-বেশি যেভাবে পারে ম্যানেজ করে দুই-একটা কিইনা রাখে। ধরেন, ২২০০ টাকায় কিনল, ২৫০০ টাকায় বিক্রি করলো। এভাবেই চলে।”
তবে সুলতানের এই কথায় সন্দেহ প্রকাশ করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান। তিনি সম্প্রতি ওমরাহ করে আসার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, “ওই জায়গাটা এমন একটা জায়গা, সেখানে গেলে কখনওই এমন মনে হবে না যে আমি দুই-চারটা পানি বেশি নিয়ে যাবো এবং সেটা গিয়ে বায়তুল মোকাররমে বেশি দামে বিক্রি করব। এটা আমার কাছে মনে হয় অসম্ভব ব্যাপার।”
জমজম কূপের পানির নামে সাধারণ পানি বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারণার সুযোগ থেকে যায় বলেও ধারণা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “প্রথমত জমজমের পানি তো বাংলাদেশে অথেন্টিকভাবে তৈরি করার কোনো স্কোপ নাই। এটার সোর্স রিয়াদ বা মদিনায়ও নাই। সোর্স হল কাবাঘরের পাশেই জমজম কূপ। ওখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে।
“তাহলে এই জিনিসটা কোথা থেকে আসছে? দেশের বাইরে থেকে। ধরেন, মক্কা থেকে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো বিদেশি পণ্য আসলে, বিশেষ করে প্যাকেটজাত যে জিনিসগুলো, সেখানে কান্ট্রি অব অরিজিন থাকতে হবে। কে আমদানি করেছে, সেই আমদানিকারকের নাম থাকতে হবে, এর ভেতর কী কী ইনগ্রেডিয়েন্ট আছে, সেই বিষয়গুলো থাকতে হবে। প্রোপার চ্যানেলে কাস্টমস পয়েন্ট পার হয়ে আসতে হবে। এটা যদি এভাবে না আসে, তাহলে ধরে নেব যে এটি বাংলাদেশে অবৈধ জিনিস।”
মতবিনিময় সভায় ক্যাব প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নানও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
তিনি বলেন, “প্রথমত, সৌদি আরব এই পানি বিক্রি করে না। সৌদি আরবে এই জমজমের পানি বিক্রি এতটাই নিষিদ্ধ, সাধারণ ড্রিংকিং ওয়াটারের দাম জমজমের পানির চেয়ে বেশি…কিন্তু বাংলাদেশে এটা বিক্রি করছে। জমজমের পানিকে পণ্যে পরিণত করলে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি যখন জাগ্রত হবে, তখন এই ব্যবসায়ীরা আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”