র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে…না, আমাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে। জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকবে।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও জার্মান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন রাষ্ট্রদূত। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক পুলিশের বিদায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক ও নবনিযুক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারের কারও বৈঠকে সেই নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি স্থান পাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়কে ‘জটিল ও কঠিন’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশটির সরকার।
নিষেধাজ্ঞায় বেনজীর আহমেদ ও র্যাবের সাবেক এক কর্মকর্তার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শুরুতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ পুলিশপ্রধান সম্মেলনে যোগ দেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। তার ভিসা পাওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে জাতিসংঘের আমন্ত্রণ থাকলে নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরের ‘জেন্টেলম্যান এগ্রিমেন্ট’ থাকার কথা সেসময় জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বৃহস্পতিবার মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠানে আইজিপির ওই সফরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হল কি না- জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আগের মত থাকার কথা জানিয়ে বলেন, “আমরা আগেই ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলোচনায় এবং প্রকাশ্যে বলেছি, কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব নিষেধাজ্ঞা নয়। আচরণের পরিবর্তনের চিন্তা থেকেই সেগুলো আরোপ করা হয়েছে।
“সুতরাং, আমরা আগের ঘটনাগুলোর জন্য জবাবদিহিতা চাচ্ছি এবং সংস্কার চাচ্ছি, যাতে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে।”
নিষেধাজ্ঞার পর র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা ‘অপরাধের’ অভিযোগের ঘটনা কমে আসার কথা তুলে ধরে অপর এক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা দেখেছি, গত বছর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে রিপোর্টেড অপরাধের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো দিক।
“আমরা দেখতে চাই কোনো ঘটনা ঘটবে না বা কোনো রিপোর্ট। তবে, এটা খুবই ভালো ইংগিত যে, সংখ্যা কমে এসেছে এবং কেউ কেউ বলেছেন, নাটকীয়ভাবে কমেছে।”
অতিরিক্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা যুক্তরাষ্ট্রের নেই জানিয়ে পিটার হাস বলেন, “আমরা এমন কোনো পর্যালোচনা করিনি, অতিরিক্ত কোনো নিষেধাজ্ঞার বিবেচনার অথবা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তার।”
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নেন।