পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যত নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিক।
তিনি বললেন, “কেন্দ্র সচিবরাই এটা করেন। কাউকে না কাউকে দিয়ে তো কাজটা (প্রশ্ন বিতরণ) করাতে হবে। সে যদি কাজটা এরকম করে ফেলে, ভবিষ্যতে আমরা কী করতে পারি?”
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে একজন কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষকসহ তিন শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ার প্রেক্ষাপটে একথা বলেন শিক্ষা সচিব। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মঙ্গলবার ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা কিছু প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন। তারপর রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজির শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক জুবায়ের হোসাইনকে।
এরপর বুধবার সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইমলাম চলমান এসএসসির গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান।
বুধবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে এক কর্মশালা শেষে দিনাজপুরের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন শিক্ষা সচিব আবু বকর।
তিনি বলেন, ভুরঙ্গামারীতে লকার থেকে কেন্দ্র সচিব কিছু প্রশ্ন নিয়ে নেন।
“বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন বিভিন্ন খামে থাকে, ফয়েল খামে। কোন সেন্টারে কতটা লাগবে, সেটা করে বড় খামে ঢোকানো হয়। কেন্দ্র সচিবরাই এটা করেন।”
ভুরঙ্গামারীতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আসার পর শুরুতে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি বলেও স্বীকার করেন শিক্ষা সচিব।
“আগেরদিন আমার কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে একটা রিপোর্ট এসেছে। তখন একটা সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, এটা সত্য নাও হতে পারে। সেখানে সাংবাদিকদের দুই পক্ষের দলাদলি আছে। একজন আরেকজনকে নাজেহাল করতে এমনটা রটাচ্ছে, এমন খবর আসছিল। সেজন্য আমরা গুরুত্ব দিইনি।”
এরপর জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টির পুরোপুরি জানতে পারেন তিনি।
এখন সচিব বলছেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকায় কেন্দ্র সচিবসহ তিনজন গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড।
পুলিশের তদন্ত চলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনই এ ঘটনার তদন্তে যাবে না। প্রয়োজন মনে হলে বিষয়টি ‘দেখবেন’ বলে জানান আবু বকর।
প্রায় চার হাজার কেন্দ্রের একটি কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে মন্তব্য করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, “আর একটা কেন্দ্রে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য বেটার কী করা যায়, সে ধরনের চিন্তা ভাবনা করতে হবে।”
তবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে না পড়ায় এবারের প্রশ্ন ফাঁসে আগের তুলনায় পার্থক্য দেখছেন তিনি।