অর্থ আত্মসাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলার বারবান্ধা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে রৌমারী থানার ওসি রূপ কুমার সরকার জানান।
তিনি আরও জানান, রাতে বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অভিযোগ করেছেন। এতে উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম (৪৮) এবং তার ভাইপো বারবান্ধা গ্রামের রঞ্জু মিয়ার (৪০) বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মারধরের শিকার মনিরুল ইসলাম এখন রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত মোট দুই লাখ ৭৫ হাজার ৫০২ টাকা যৌথ হিসাব নম্বরে জমা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি আইয়ুব আলীর মেয়াদ শেষ হলে গত বছর তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।
পরে প্রধান শিক্ষকসহ ব্যাংকে যৌথ হিসাব খুলতে যান সভাপতি মনিরুল ইসলাম। এ সময় তিনি দেখেন, ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই। সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে সব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক এই কাজটি করেছেন উল্লেখ করে মনিরুল আরও বলেন, এ ঘটনার তদন্ত এবং প্রতিকার চেয়ে রোববার তিনি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।
মনিরুল আরও বলেন, “এতে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক এবং তার ভাইপো রঞ্জু মিয়া আমাকে এলোপাথাড়ি মারপিট করেন। এ সময় স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।”
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার বলেন, “মারধরের ঘটনায় মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা, ফোলা ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। তিনি আজও চিকিৎসাধীন।”
স্কুলের তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী বলেন, “আমি এক বছর ধরে অসুস্থ। সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানি না এবং আমাকে জানানোও হয়নি। আমার স্বাক্ষর জাল করে সব টাকা আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমার অসুস্থতার খবর শুনে একবারের জন্যও দেখতে আসেননি ওই প্রধান শিক্ষক।”
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম সরোয়ার রাব্বী বলেন, “অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হবে।”
রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি ফিরোজ মিয়া বলেন, “তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে সভাপতি মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। এর জের ধরে সোমবার ওই প্রধান শিক্ষক ও তার ভাতিজা রঞ্জু মিয়া মিলে সভাপতির ওপর হামলা চালান।”
তবে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী অসুস্থতার কারণে সব কিছু ভুলে গেছেন। তার স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সভাপতি মনিরুল ইসলামকে পেটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “ঘটনাটি আমার ভাতিজা রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে ঘটেছে। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।“