ওয়ার্কশপ কর্মী হলেও ফেইসবুকে পরিচয় দিতেন ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে। ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছেন ১২টি আর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন অর্ধশতাধিক; এরপর সবার কাছ থেকেই করেন অর্থ আত্মসাৎ।
ওই প্রতারকের নাম মমিনুল ইসলাম ওরফে মামুন। ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার দিনাজপুর থেকে ৩০ বছর বয়সী এ যুবককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন) এস এম আশরাফুল আলম।
মমিনুলের মোবাইল ফোনে অর্ধশতাধিক তরুণীর সঙ্গে ভিডিওকলের কথোপকথনের রেকর্ড এবং অসংখ্য ন্যুড ভিডিও পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই যুবক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় দিতেন, কখনও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, কখনও মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কখনও ব্যাংক কর্মকর্তা আবার কখনও ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে একাধিক চাকরিজীবী ও সাধারণ তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন।
“পরে ওই তরুণীদের সুবিধাজনক স্থানে বদলি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বিদেশ গমনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।”
ওই প্রতারক পরিচয় গোপন করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতেন জানিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, “ইন্টারনেট বা ফেইসবুক থেকে তার শরীর ও চেহারার সঙ্গে মিলে যায়, এমন শারীরিক গঠনের ব্যক্তির মুখে মাস্ক পরা কিংবা মুখাবয়ব অস্পষ্ট- এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে নারীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন।
“সম্পর্কের একপর্যায়ে মামুন নারীদের বিয়ের প্রস্তাব দিত। যদি কোনো নারী তার প্রস্তাবে সাড়া না দিতেন, তাহলে আত্মহত্যা করবেন বলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়েতে রাজি করাতেন। পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে নারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করতেন।”
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, “বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছেন অথবা তার ছুটি হচ্ছে না ছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে সরাসরি বিয়ে করতে আসতে পারছেন না বলে জানাতেন মমিনুল। পরে তরুণীর নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া কাবিননামা বানিয়ে কুরিয়ার করে দিতেন। মেয়েটিকে তাতে সই করে নিজের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলতেন।
“ভুয়া কাবিননামায় সই করার কিছুদিন পর মমিনুল ভুক্তভোগীর বাসায় যান ও ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে কিছুদিন একসঙ্গে বসবাস করেন। সেখান থেকে চলে আসার পর তিনি মেয়েটিকে আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিওকলে আসতে বলতেন।”
এমন অবস্থায় ফোনের স্ক্রিন রেকর্ড করে মমিনুল তা সংরক্ষণ করতেন জানিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, “পরবর্তী সময়ে তিনি ওই ভিডিওগুলো অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয়-হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করতে থাকেন। একপর্যায়ে মেয়েটির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন মমিনুল।”
ভুক্তভোগী এক নারী পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন জানিয়ে তিনি বলেন, মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশন টিম মমিনুলকে গ্রেপ্তার করে।